‘এত দিন নগর ভবন যাঁদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, তাঁদের কোয়ালিটি সাব-স্ট্যান্ডার্ড’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই দিন আগে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে নগর ভবনের নানা অসংগতি-অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেছেন নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। আজ রোববার সকালে নগরের কালুশাহ সড়কের ভাড়াবাড়িতে এই মতবিনিময় সভা ডাকেন নতুন মেয়র।
সভায় আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ‘এত দিন নগর ভবন যাঁদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, তাঁদের কোয়ালিটি সাব-স্ট্যান্ডার্ড। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা যে নতুন যাত্রা শুরু করব, তাতে প্রধান নির্বাহী পদে কোনো কর্মকর্তা এখানে যোগদান করতে চাইছেন না। কেন চান না, আমি সেটা চার মাস ধরে জানার চেষ্টা করেছি। যাঁদেরই বলি, তাঁরাই অভিযোগ করেন, এখানে গেলে ইজ্জত থাকে না, সম্মানহানি হয়। একজন সচিব কয়েক দিন আগে যোগদান করে আবার বদলি হয়ে যেতে চেয়েছেন। আমি অনেক অনুরোধ করে তাঁকে রেখেছি। তিনিও ছুটিতে আছেন।’
করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করে নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, ‘এত দিন যাঁদের দিয়ে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালানো হয়েছে, তাঁদের কোয়ালিটি সাব-স্ট্যান্ডার্ড। আমি এখানে ব্যবসা করতে আসিনি। মানুষকে সেবা দিতে এসেছি। তাই আমি কারও প্রতি অন্যায় হস্তক্ষেপ করতে চাই না। কিন্তু কেউ যদি অন্যায় করে, দুর্নীতি করে থাকে, তবে তাঁকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেওয়ার আগে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছর পর বরিশাল নগরবাসীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী এই বরাদ্দ দিয়েছেন। এই অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ নেব। পরিকল্পিতভাবে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। আর এতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, পয়োনিষ্কাশন, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট সংস্কার, সড়কের মোড়গুলো সম্প্রসারণ, সৌন্দর্য বর্ধনসহ জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে।’
মেয়র পদে জয়ী হওয়ার পর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দেশের বড় বড় শহরের সিটি করপোরেশনের কাজকর্ম, উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দেখার জন্য সেসব শহরে ঘুরেছেন বলে জানান আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘যখনই আমি এসব সিটির উন্নয়ন দেখে আমাদের বরিশাল নগরকে মিলিয়েছি, তখন লজ্জা পেয়েছি। অথচ আমাদের অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা গত ১০ বছরে এই নগরকে কিছুই দিতে পারিনি। আমি এই তিক্ত অভিজ্ঞতা কাটিয়ে উঠতে চাই। নগরবাসী আমাকে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন, আমার একমাত্র কাজ হবে সেসব প্রতিশ্রুতি-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা।’
বরিশালের দুটি বাস টার্মিনালের অবস্থা খুবই বেহাল বলে মতবিনিময় সভায় মত দেন নবনির্বাচিত মেয়র। যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। দ্রুত এ দুটি টার্মিনালের উন্নয়নে তিনি উদ্যোগ নেবেন বলে জানান। আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে পুরোনো বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি ঘুরে আমি যা দেখেছি তা অবর্ণনীয়। এখানে রোগীদের চিকিৎসার সুবিধা বলতে কিছু নেই। ব্যবস্থাপনা বলতে কিছু নেই। রোগীদের সীমাহীন ভোগান্তি আমাকে ব্যথিত করেছে। এভাবে একটি বড় হাসপাতাল চলতে পারে না।’ এ হাসপাতালের উন্নয়ন এবং চিকিৎসাসেবা উন্নত করতেও উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান মেয়র খায়ের আবদুল্লাহ।
মঙ্গলবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেবেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তিনি তাঁর ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হবেন। ওই দিন সকাল ১০টার দিকে নগর ভবনের সামনে ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে খোলা জায়গায় নাগরিকদের উপস্থিতিতে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
আমন্ত্রণ করেছেন বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছেলে আবিদ আবদুল্লাহকে নিয়ে আগৈলঝাড়ার সেরাল গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আমন্ত্রণ পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
এবার দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আবুল খায়ের আবদুল্লাহর সঙ্গে ভাতিজা ও সদ্য বিদায়ী মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বিরোধের বিষয়টি ছিল দেশজুড়ে আলোচিত। এ বিরোধ এখনো চলছে। এই বিরোধ কেন্দ্র করে আবুল খায়ের আবদুল্লাহর বড় ভাই বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গেও ছোট ভাইয়ের দূরত্ব চলছিল। দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে বড় ভাইকে নিমন্ত্রণ জানাতে তাঁর বাড়িতে যাওয়ার ঘটনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অনেকে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ৯ নভেম্বর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার চার দিন আগে দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি।