দেড় বছর ধরে ২০ জনের ভিজিডির চাল আত্মসাতের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
জয়পুরহাটের কালাই উপজলার উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে ২০ জন সুবিধাভোগীর সরকারি বরাদ্দের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় নাম থাকলেও ওই ২০ জন দেড় বছর ধরে কোনো চাল পাননি। এই দুস্থ মানুষের অনেকে জানেনই না যে তাঁদের নামে সরকার এত দিন চাল বরাদ্দ দিয়ে আসছে।
ওয়াজদ আলী উদয়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। বৈষম্যবিরাধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে জয়পুরহাট সদর থানায় হওয়া একাধিক মামলায় আসামি হিসেবে তাঁর নাম রয়েছে। তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন।
উদয়পুর ইউপি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি ইউনিয়নের ৪২৯ জন সুবিধাভোগীর জুলাই ও আগস্ট মাসের ৩০ কেজি করে ভিজিডির চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে ইউপি কার্যালয় থেকে সুবিধাভোগীদের চাল বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ৪০৯ জন সুবিধাভোগী চাল নিয়ে গেছেন। ২০ জন সুবিধাভোগীর ৪০ বস্তা (৩০ কেজি ওজন) চাল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে পড়ে আছে।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাহফুজা খাতুন বলেন, তালিকা অনুযায়ী চাল নিতে না আসা সুবিধাভোগীদের সঙ্গে যোগাযাগ হয়েছে। ২০ জন সুবিধাভোগী তাঁদের নামে চাল বরাদ্দের কথা জানতেন না। গত ১৮ মাস ধরে তাঁদের নামের বরাদ্দের চাল উত্তোলন করা হচ্ছে।
ইউনিয়নের দুর্গাপুর-বহুতী গ্রামের বাসিন্দা মোছা. মাহমুদার নাম সুবিধাভোগীর তালিকায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি তো কিছুই আগে জানতে পারিনি। কয়েক দিন আগে ইউপির মেম্বার ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের লোকজন এসে আমাকে বলেছেন, ইউনিয়নের গুদামে আমার চাল পড়ে আছে। আমি কেন চাল নিতে যাইনি, তাঁদের এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়েছি। তখন বলেছি, দেড় বছর ধরে চাল উঠেছে। আমি তো চাল পাইনি। তাহলে আমাকে দেড় বছরের চাল দিতে হবে।’
৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান নিজে চাল বিতরণ করতেন। মামলা হওয়ার পর চেয়ারম্যান আত্মগোপনে আছেন। প্যানেল চেয়ারম্যান চাল বিতরণ করতে গিয়ে চালবাজির ঘটনা ধরা পড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বিতরণ না হওয়া চালগুলো বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। তখন তাঁরা উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি জানানোয় চাল বিক্রির চেষ্টা ভেস্তে গেছে।
উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম চাল বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউপি সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে জুলাই ও আগস্ট মাসের চাল তালিকা ধরে বিতরণ করেছেন। অনেকেই চাল নিতে আসেননি। তাঁদের চাল ইউনিয়ন পরিষদে রয়েছে।
কালাই উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, ২০ জন সুবিধাভোগীর নামে দেড় বছর ধরে চাল উত্তোলন করা হচ্ছে। অথচ ২০ জন সুবিধাভোগীর কেউই তা জানতেন না। সেপ্টেম্বর মাসে চাল বিতরণের সময় ঘটনাটি ধরা পড়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত করছে।