এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
এবার জিইসি র্যাম্প নিয়ে বিতর্ক
১৫টি র্যাম্পের ৬টি আগে বাদ দেওয়া হয়েছে। জিইসি মোড় র্যাম্প নির্মাণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও দুই ধরনের মত দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে ৬টি বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন নগরের জিইসি মোড়ের র্যাম্প বাদ দেওয়ার দাবি উঠেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন নিজেই র্যাম্পের নির্মাণকাজের বিরোধিতা করেছেন। এই অবস্থায় র্যাম্পটির নির্মাণকাজ আদৌ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
নগরের জিইসি মোড় থেকে ওয়াসা মোড় পর্যন্ত নির্মাণাধীন এই র্যাম্প নিয়ে শুরু থেকে বিরোধিতা ছিল। নির্মাণকাজ বন্ধ করতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম। আপত্তি জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তবে এসব আপত্তি উপেক্ষা করে র্যাম্পের নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জিইসি মোড় র্যাম্প নির্মাণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও দুই ধরনের মত দিয়েছেন। এক পক্ষের মতে, এই র্যাম্প করা না হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অনেকটাই অকার্যকর হয়ে যাবে। কেননা এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার মূল অংশ হচ্ছে এই র্যাম্প। অন্য পক্ষের দাবি, র্যাম্প নির্মাণের কারণে নিচের সড়কের প্রশস্ততা কমে যাবে। তাতে যানজট বাড়বে।
এর আগে টাইগারপাস র্যাম্প নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। টাইগারপাসে ঐতিহ্যবাহী দ্বিতল সড়কের ক্ষতি করে এবং শতবর্ষী গাছ কেটে র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় তাতে বাধা দেয় চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ।
পরে টাইগারপাসের র্যাম্পসহ ৬টি র্যাম্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বাদ দেয় সিডিএ। গত ২৮ নভেম্বর সিডিএর বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। টাইগারপাস ছাড়া অন্য পাঁচটি র্যাম্প হচ্ছে আগ্রাবাদের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনে নামার র্যাম্প, আগ্রাবাদের অ্যাকসেস রোডের ওঠা-নামার দুটি র্যাম্প, কেইপিজেডে নামার একটি র্যাম্প এবং সিমেন্ট ক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্টের দিকে নামার র্যাম্প।
এবার জিইসি র্যাম্পের বিরোধিতা করেছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেনসহ শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা। গত বুধবার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জিইসি মোড়ের র্যাম্প হতে দেওয়া যাবে না। এটি আমি মেয়র হিসেবে স্ট্রংলি (শক্তভাবে) বলতে চাই। আমি সিডিএকে বলেছি, সিডিএর চেয়ারম্যানকে এবং এখানে সিটি নিয়ে যাঁরা পরিকল্পনা করেন, তাঁদেরও বলেছি। আমার মনে হয় এই জায়গায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটা ওই সময়কার একজন ব্যবসায়ীকে খুশি করার জন্য, তাঁর হোটেলের ব্যবসা ভালো হওয়ার জন্য একটা র্যাম্প সেখানে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। কোনো একজন ব্যক্তির লাভের জন্য আমরা আমাদের সিটিতে যানজট করতে পারি না।’
সিডিএর প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগ্রাবাদ থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত মধ্যবর্তী অংশে কোনো র্যাম্প নেই। এর মধ্যে টাইগারপাসের র্যাম্পও করা যায়নি। এখন যদি জিইসি মোড়ের র্যাম্প করা না যায়, তাহলে নগরের নিউমার্কেট, জামালখান, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, লাভ লেন, জিইসি মোড়, মেহেদীবাগ, খুলশী, লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দারা বিপাকে পড়বেন।
তখন তাঁদের হয় আগ্রাবাদে গিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে হবে, না হলে ওঠা যাবে নগরের দুই নম্বর গেটের বেবি সুপার মার্কেট এলাকা এবং শুলকবহর থেকে। আগ্রাবাদ থেকে এই দুটি প্রান্তের দূরত্ব যথাক্রমে সাড়ে ছয় ও সাত কিলোমিটার।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এক্সপ্রেসওয়েতে বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল করছে।
বিশেষজ্ঞদের দুই মত
জিইসি মোড়ে র্যাম্প হলে যানজট কমার চেয়ে আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও সড়ক পরিবহনবিশেষজ্ঞ সুভাষ বড়ুয়া।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি হচ্ছে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে। পতেঙ্গা প্রান্তে ওঠা-নামার পথ রাখা হলেও লালখান বাজারে কেন ওঠার পথ রাখা হয়নি? সেখানে ওঠার পথ থাকলে আজকের পরিস্থিতি তৈরি হতো না। জনস্বার্থে জিইসি মোড়ের র্যাম্পের নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে। এ জায়গা এমনিতেই অত্যন্ত যানজটপ্রবণ। এখানে নতুন র্যাম্প করলে মূল সড়কের প্রশস্ততা কমে গিয়ে জিইসিতে যানজট বেড়ে যাবে।
সিডিএর দায়িত্বশীল কোনো প্রকৌশলী নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি। দুজন প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, জিইসি মোড়ের র্যাম্প নিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়রের বিরোধিতার বিষয়টি শুনেছেন। এই অবস্থায় কোনো কিছু মন্তব্য করা শোভনীয় হবে না। তবে এক্সপ্রেসওয়ে কার্যকর করার জন্য জিইসি মোড়ের র্যাম্পের বিকল্প নেই। প্রয়োজনে এক্সপ্রেসওয়ের বিশদ নকশা ও গুরুত্বের বিষয়টি মেয়রের কাছে তুলে ধরা হবে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, জিইসি মোড়ে ওঠার র্যাম্পটি অবশ্যই নির্মাণ করতে হবে। না হলে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সুযোগ সংকুচিত হবে। ফলে মানুষ এই এক্সপ্রেসওয়ে কম ব্যবহার করবে। এতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গাড়ি কম চলবে এবং প্রত্যাশিত আয় হবে না।