টাঙ্গাইলের কালিহাতী
ফুলঝাড়ুতেই ফিরেছে সচ্ছলতা
ফুলঝাড়ু কারখানায় কাজ করে প্রতিদিন ৪০০–৫০০ টাকা উপার্জন করা যায় বলে শ্রমিকেরা জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার যমুনা তীরবর্তী এলাকার মানুষের সচ্ছলতা ফিরছে ফুলঝাড়ুশিল্পে। যমুনার ভাঙনে উপজেলার দুর্গাপুর ও গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বছরের অনেকটা সময় কর্মহীন থাকতে হয়। কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ফুলঝাড়ু তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করায় এ অঞ্চলের পাঁচ শতাধিক মানুষের সচ্ছলতা ফিরেছে।
কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০-১২ বছর আগে দুর্গাপুর ইউনিয়নের পটোল বাজার এলাকার নজরুল ইসলাম, আবদুল হাই, সোলেমান ও মাজেদুর রহমান খাগড়াছড়ি থেকে উলু ফুল (ঝাড়ুর ফুল) এনে প্রথমে এখানে ফুলঝাড়ু তৈরি শুরু করেন। নিজেরা সঙ্গে থেকে স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে বাঁধাই করে ফুলঝাড়ু তৈরি করতেন। সেই ঝাড়ু টাঙ্গাইল ও ঢাকায় হকারদের মাধ্যমে বিক্রি শুরু করেন। ব্যবসাটি লাভজনক হওয়ায় তাঁদের উন্নতি হতে থাকে। পাশাপাশি এলাকার দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে থাকে। গত ১০–১২ বছরে কালিহাতীর মগড়া, পটোল, দুর্গাপুর, কদিমহামজানী, শ্যামশৈল, কুর্ষাবেনু, পাথরঘাটসহ আশপাশের এলাকায় ৫০টি ফুলঝাড়ু তৈরি কারাখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারাখানায় পাঁচ শতাধিক নারী পুরুষ–শ্রমিক কাজ করছেন। উৎপাদনের ভিত্তিতে এসব কারখানায় কাজ করে প্রতিদিন ৪০০–৫০০ টাকা উপার্জন করা যায় বলে শ্রমিকেরা জানিয়েছেন।
পটোল বাজারের একটি ঝাড়ু তৈরির কারখানার শ্রমিক সেলিম মিয়া জানান, ঝাড়ু তৈরি করে তাঁদের কর্মসংস্থান হয়েছে।
কারখানাগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ শ্রমিকেরা উলু ফুল ও পাটখড়ির সঙ্গে গুনা দিয়ে বেঁধে আঁটি তৈরি করছেন। পরে বাঁধাই করা ওই আঁটিগুলোতে স্কচ টেপ বা পিভিসি পাইপ লাগিয়ে নারী শ্রমিকেরা ব্যবহার করার উপযোগী করে তুলছেন। শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আগে কৃষিকাজ করতাম। তখন খুব কষ্ট হতো। বর্তমানে ঝাড়ু তৈরি করি। প্রতি ঝাড়ু থেকে তিন থেকে আট টাকা করে পেয়ে থাকি। এতে আগের চেয়ে আমার সংসার অনেক ভালো চলে।’
রফিক মিয়া নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘প্রতিদিন অনায়েসে ৫০০–৬০০ টাকা আয় করতে পারি।’
পটোল বাজারের ফুলঝাড়ু–কারখানার মালিক নজরুল ইসলাম জানান, একসময় ফুলঝাড়ু তৈরি করে অনেক লাভ হতো। এখন পরিবহন খরচসহ উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাই আগের মতো লাভ হয় না। তিনি জানান, নিজের ৩০ শতাংশ জমিতে উলু ফুল চাষ শুরু করেছেন। সফল হতে পারলে এসব এলাকার উৎপাদিত উলু ফুল দিয়েই কারখানাগুলো সচল রাখা যাবে। সেই সঙ্গে অনেক কম খরচে ফুলঝাড়ু তৈরি করা যাবে।
দুর্গাপুরের ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম জানান, চরাঞ্চলে ফুলঝাড়ু কারখানা তৈরি হওয়ায় যমুনার ভাঙনকবলিত কর্মহীন মানুষের মধ্যে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। সহজ শর্তে ঋণদানের ব্যবস্থা করা গেলে এসব ক্ষুদ্র শিল্পে আরও উন্নয়ন হতো।