মাগুরায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
মাগুরায় মহম্মদপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামে তাঁকে পিটুনি দেওয়া হয়। আজ বুধবার ভোরে তিনি মহম্মদপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান।
ওই নেতার নাম মো. রিয়াজ মোল্যা (৩০)। তিনি মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামের নিজাম উদ্দিন মোল্যার ছেলে। রিয়াজ মোল্যা নহাটা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ছিলেন।
রিয়াজ মোল্যার পরিবারের অভিযোগ, পূর্বশক্রতার জেরে নহাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে রিয়াজকে হত্যা করেছেন। কিন্তু ওই ইউপি চেয়ারম্যান অবশ্য দাবি করেছেন, ঘের থেকে মাছ চুরি করতে গিয়ে এলাকাবাসীর পিটুনিতে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা রাহুল দেব ঘোষ জানান, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে জরুরি বিভাগে রিয়াজ মোল্যা নামের ওই যুবককে আনা হয়। একজন পুলিশ সদস্যসহ তিনজন তাঁকে নিয়ে আসেন। রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। রোগী খুব দ্রুত শ্বাস নিচ্ছিল। ভোর ছয়টার দিকে তিনি মারা যান।
নিহতের বাবা নিজাম উদ্দিন মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাতে খবর পাই, আমার ছেলেরে মারিছে (হত্যা করা হয়েছে)। যারা মারিছে, তারা আমাগের বিরুদ্ধে দলের লোক। চেয়ারম্যানের (নহাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তৈয়েবুর রহমান) নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেরে ডেকে নিয়ে মারিছে (হত্যা করা হয়েছে)।’
রিয়াজ মোল্যাকে পূর্বশক্রতার জেরে ডেকে নিয়ে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নহাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. তৈয়েবুর রহমান। ওই অভিযোগের বিষয়ে বুধবার সকালে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমীন উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির ঘের থেকে রিয়াজ মাছ চুরি করছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে দায়িত্বে থাকা নৈশপ্রহরী জসিম উদ্দিন চিৎকার শুরু করলে চারপাশ থেকে লোকজন এসে তাঁকে ‘গণপিটুনি’ দেন। ‘গণপিটুনি’ দেওয়ার পর তাঁকে খবর দেওয়া হয়। তখন তিনি নহাটা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে ফোন করলে একজন পুলিশ সদস্য আসেন। পরে নৈশপ্রহরী জসিম উদ্দিন, একজন পুলিশ সদস্যসহ রিয়াজকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত রিয়াজ মোল্যা ও চেয়ারম্যান মো. তৈয়েবুর রহমান একই গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গত আগস্ট মাসে ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য হন। বিএনপির রাজনীতি করলেও এলাকায় তিনি নহাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মাতবর মো. কামরুজ্জামান জিল্লুর পক্ষের লোক ছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনেও চেয়ারম্যান তৈয়েবুর রহমান বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল তাঁদের। তৈয়েবুর রহমান আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান জিল্লু প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ১২টার দিকে চেয়ারম্যান রিয়াজকে লোক দিয়ে বাড়িতে ডেকে এনে প্রথমে মারধর করেন। পরে আরও দুই দফায় তাঁকে মারধর করার পর অবস্থা খারাপ হলে পুলিশকে খবর দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে রিয়াজের এক বড় ভাই এবং ভাতিজাকে পুলিশ গায়েবি মামলায় জেলে পাঠিয়েছে। সেখানে তিনি এই মুহূর্তে মাছ চুরি করতে যাবেন, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তাঁকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উল ইসলাম বুধবার সকালে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রাত আনুমানিক আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে ফুলবাড়ি একটি বাঁওড়ে মাছ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন ওই যুবক। এ সময় স্থানীয় মানুষেরা তাঁকে পিটুনি দেন। এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সকালে তিনি মারা যান।