শুধু মোটরসাইকেলই না, সব গাড়ির জন্যই শহরে গতি ৩০ কিমি: ইলিয়াস কাঞ্চন
নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, সরকার মোটরযানের যে গতি নির্ধারণ করেছে, তাতে শহরে গতিসীমা ৩০ কিলোমিটার শুধু মোটরসাইকেলের জন্য না, সব গাড়ির জন্যই প্রযোজ্য।
আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪-এর ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন এসব কথা বলেছেন। সড়ক নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করা ৯টি সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম রোড সেফটি কোয়ালিশন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন জোটের সদস্য নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রধান ইলিয়াস কাঞ্চন। বক্তব্য পাঠ শেষে সাংবাদিকেরা শহরে মোটরসাইকেলের গতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেসব সড়কের গতিসীমা ৩০ করা হয়েছে, সেসব সড়কে গাড়ির গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার করা হয়নি। জাতিসংঘের নির্দেশনা অনুযায়ী শহরে ৩০ কিলোমিটারের বেশি সরকার চাইলেও পারবে না। সেখানে ৩০ কিলোমিটার করা হলো, এটি সব গাড়ির জন্য, শুধু মোটরসাইকেলের জন্য না। মোটরসাইকেলের চালকেরা ভুল বুঝছেন, ব্যাখ্যাটা না জেনে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ৭ মে মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ জারি করে। তাতে সড়ক ও মোটরযানের শ্রেণিভেদে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, অবিভক্ত ও দুই লেনবিশিষ্ট শহর ও প্রাইমারি আরবান সড়কে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। একই শ্রেণির সড়কে মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাসের জন্য গতি ৪০ কিলোমিটার। তবে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, মিনিট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের জন্য এ ধরনের সড়কে কোনো গতিসীমা নেই।
মোটরযানের গতিসীমা নির্ধারণ করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে কোয়ালিশন বলেছে, এই নির্দেশিকার যথাযথ বাস্তবায়ন ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। কম গতিসম্পন্ন মোটরযানের চালকেরা সামনে সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহারকারীদের সহজে দেখতে পারবেন এবং গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন।
মোটরসাইকেলের গতিসীমা প্রসঙ্গে এই প্ল্যাটফর্ম বলছে, ঘনবসতিসম্পন্ন গ্রামাঞ্চল ও শহরের জন্য মোটরসাইকেলের গতিসীমা নির্ধারণ করায় সড়কে চলাচলের জন্য শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা উপকৃত হবেন। বিশ্বের অনেক দেশ শহরাঞ্চলের রাস্তায় সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কম গতিসীমা নির্ধারণ করেছে।
রোড সেফটি কোয়ালিশন কিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে—কীভাবে বিভিন্ন গতির মোটরযানগুলো ওভারটেক করবে, লেন পরিবর্তন করবে। সড়কে কবে থেকে নির্দেশিকা প্রয়োগ হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা। বাস্তবায়ন নিশ্চিতে প্রতি মাসে একটি সমন্বয় সভার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও কারণ বিশ্লেষণ করে তথ্য প্রদান করা।
এ ছাড়া বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ ও সড়ক পরিবহন বিধিমালায় যানবাহন ও পরিবহনসেবাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার বিষয় অনেকটাই অনুপস্থিত। সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি আমলে নিয়ে একটি সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কোয়ালিশনের সদস্য ব্র্যাক, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সিআইপিআরবি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, অর্থোপেডিক সোসাইটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বিএনএনআরসি ও গণস্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।