‘শুধু নেতৃত্বে নয়, আওয়ামী লীগের চিন্তাধারা ও আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে’

কুষ্টিয়া কুমারখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আজ রোববার আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানছবি: প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তন করলে শুধু হবে না, তাদের চিন্তাধারায় ও আচরণে পরিবর্তন আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) এ দেশের মানুষ, রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। আমাদের কেড়ে (রাজনীতি) নেওয়া যেমন অন্যায় ছিল, আমরাও আরেকজনের কেড়ে নেওয়ার অধিকার, এটা আমরা বলি না।’

রোববার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া কুমারখালীতে একটি পার্কের মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ও আর্থিক সহায়তা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল, এখন শোনা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ তাদের নেতৃত্ব পরিবর্তন করে পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা করছে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, ‘বহু দেশে আছে, গণহত্যা যারা সংঘটিত করেন এবং তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাদের বহু দলকে একদম নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। সেটা সময়ের পরিক্রমায় দেখা যাবে। এটা আজকে বললেই হবে না।’

কুষ্টিয়া কুমারখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন
ছবি: প্রথম আলো

শফিকুর রহমান বলেন, ‘১৪ দল বসে আমাদের নিষিদ্ধ করেছিল। এটা কোথাও আছে আইনে? আমি বলতে পারব, আজকে জাসদ নিষিদ্ধ, এটা বলার অধিকার আমার আছে? এটা একটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার ভেতর দিয়ে যায় অথবা আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে যায়। তারা কোনো কিছুরই পরোয়া করে নাই।’

বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও ঢালাওভাবে মামলা হচ্ছে, এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, ‘জাতির কাছে আহ্বান জানিয়েছি এ ধরনের অপকর্ম কেউ যেন না করে। ১০ জন দোষীর সঙ্গে একজন নির্দোষ মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে হ্যারাজ করার জন্য আসামি করা হলে আমরা দোষী হব। আমরা বলেছি, এ কাজ কেউ করবেন না।’

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান দাবি করে বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে নির্যাতিত দল। কিন্তু যারে–তারে মামলার আসামি করব না। হাজার হাজার মামলা করব, এটার ইচ্ছা নেই।’

জামায়াতে ইসলামী কুষ্টিয়া জেলা শাখার আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের নির্বাহী সদস্য ও পরিচালক মোবারক হোসাইন।

কুষ্টিয়া জেলা শাখার সেক্রেটারি সুজাউদ্দীন জোয়ার্দ্দারের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ফরহাদ হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়ার সমন্বয়ক পারভেজ মোশাররফ, তৌকির আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবির কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি ইমরান হোসাইন, শহর শাখার সভাপতি সেলিম রেজা ও আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির বলেন, ‘অনেকে বলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমি বলব, বাংলাদেশ জুলুমমুক্ত হয়েছে। এই জুলুম যেন আর না হয়, সে জন্য পাহারা দিতে হবে।’

মতবিনিময় সভা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুষ্টিয়ায় বাড়ি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও কুষ্টিয়া শহরে গত ৫ আগস্ট নিহত ১৩ জনের প্রত্যেক পরিবারকে নগদ দুই লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেন জামায়াতের আমির।

এর আগে আজ রোববার সকাল সাতটায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কুষ্টিয়ায় যারা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে ঢাকা-বরিশাল ফরিদপুর সদরের মুন্সিবাজার এলাকায় যাত্রাবিরতি করেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। তিনি সেখানে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এই সময় তিনি বলেন, শহীদ পরিবারের ক্ষতি যেন আল্লাহ পুষিয়ে দেন। আল্লাহ যেন তাঁদের শহীদ হিসেবে কবুল করেন। তিনি বলেন, আকাশে এখনো কাল মেঘ আছে, আল্লাহ যেন তা সরিয়ে দেন। আকাশ যেন ফর্সা হয় দিনের আলোয় যেন বাংলাদেশ ঝলমল হয়ে ওঠে।

ঢাকা-বরিশাল ফরিদপুর সদরের মুন্সিবাজার এলাকায় আজ রোবকার নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান
ছবি: প্রথম আলো

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে সামনে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বড় পূজা আসছে, সে ব্যাপারে সজাগ থেকে পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির।

এ বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘যারা মাইনরিটি মাইনরিটি বলে মানুষের ঘারে চেপে মুসলমানদের বেইজ্জত করতে চায়, তারা কিন্তু বসে নেই। এদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। এ দুষ্কৃতকারীরা যেন ফাঁকতালে কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে, শৃঙ্খলা নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে ইনশা আল্লাহ।’

এ সময় ফরিদপুর জেলা জামায়াতের আমির বদরুদ্দিন, নায়েবে আমির ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, জেলা সেক্রেটারি আব্দুল ওয়াহাব, পৌর আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম, পৌর সেক্রেটারি ইব্রাহিম মুনতাজির তাকিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।