আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতা-কর্মীকে একসঙ্গে দেখলেই ধোলাইয়ের ঘোষণা বিএনপি নেতার

রাজশাহীর বাগমারায় জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন ভবানীগঞ্জ পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুর রাজ্জাক প্রামাণিক। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতা-কর্মী একত্রে দেখলেই ধোলাই দেওয়ার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ভবানীগঞ্জ হেলিপ্যাড মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

যেখানে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতা-কর্মী একসঙ্গে থাকবেন, সেখানেই ধোলাই দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুর রাজ্জাক প্রামাণিক। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ভবানীগঞ্জ হেলিপ্যাড মাঠে আয়োজিত জনসভার উদ্বোধনকালে বক্তব্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের এ নির্দেশনা দেন তিনি।

ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর পালন উপলক্ষে ভবানীগঞ্জ ও তাহেরপুর পৌরসভা ছাত্রদল এই জনসভার আয়োজন করে। সভায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের একাংশের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, ‘১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কারণে ঘরে ঘুমাতে পারেননি বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মিথ্যা মামলার আসামি করে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। জেলে যেতে হয়েছে। স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেননি। গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর স্বস্তি পেয়েছেন। তাই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার সুযোগ নেই।’

ভবানীগঞ্জ পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক শাহিনুর ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুবদলের স্থানীয় নেতা আবদুল মালেক, শাহাদত হোসেন, মামুনুর রশিদ প্রমুখ।

রাজশাহীর বাগমারায় ৭ নভেম্বর উপলক্ষে আয়োজিত জনসভা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ভবানীগঞ্জ হেলিপ্যাড মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

সভার প্রধান অতিথি রাজশাহী জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম তাঁর বক্তব্যে সংগঠনের একটি অংশের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ থেকে সাত বছর আগে প্রকাশ্যে বাগমারায় কোনো কর্মসূচি পালন করেননি। আপনারা ম্যাডাম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর পদত্যাগ করে “আর রাজনীতি করব না”বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাঁরা এখন সুসময়ে আবার দলে সক্রিয় হচ্ছেন।’ তাঁদের বিষয়ে সজাগ থাকার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান রেজাউল করিম। তিনি সব প্রকার গ্রুপিং বন্ধ করে আগামী দিনে সব নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান।

সভার প্রধান বক্তা মনিরুজ্জামানও দলের একটি অংশের নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে হারানো হয়েছে।

জনসভা মঞ্চে প্রধান অতিথি রেজাউল হকের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন অব্যাহতি পাওয়া বাগমারা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মহব্বত হোসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ হেলিপ্যাড মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

প্রধান অতিথির বক্তব্য চলাকালে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া মহব্বত হোসেন। তিনি স্লোগানও দেন সভায়। গত ১৯ অক্টোবর মাছ লুট, চাঁদাবাজি, প্রভাব বিস্তারসহ শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বাগমারা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

উপজেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে অব্যাহতি পাওয়া একজন নেতাকে পাশে নিয়ে সভা ও পুনর্বাসনের চেষ্টা করাও আরেক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ।

এদিকে এই জনসভার আগে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক স্ট্যাটাস দিয়ে এই জনসভার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে ঘোষণা দেন। এটা দলীয় গ্রুপিং তৈরির অনুষ্ঠান বলে তিনি মন্তব্য করেন।