মধ্যরাতে কেরুর প্রধান ফটক থেকে ১০০ লিটার মদসহ গ্রেপ্তার ৩
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের তৈরি ১০০ লিটার বাংলা (দেশি) মদভর্তি কন্টেইনারসহ কোম্পানির এক ট্রাকচালক ও তাঁর দুই সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে দর্শনা থানা–পুলিশের একটি টহল দল কোম্পানির প্রধান ফটকের পাশ থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে সাইফুল ইসলাম (৪০) কেরুর ট্রাকচালক ও প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকনেতা। তাঁর বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের আকুন্দবাড়িয়া গ্রামে। অপর দুজন সাইফুল ইসলামের সহযোগী দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর চৌধুরীপাড়ার নজরুল ইসলাম (৩৫) ও দর্শনা পৌর এলাকার কেরু হাসপাতালপাড়ার বাসিন্দা সুজন খান (৩৪)।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, থানার উপপরিদর্শক শামীম রেজা বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার তিন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছেন কি না, সে বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক রাজীবুল হাসান ১০০ লিটার বাংলা মদসহ কেরুর শ্রমিকদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, কোম্পানির প্রধান ফটকের পাশ থেকে ট্রাকচালক সাইফুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি শুনেছেন। রাজীবুলের দাবি, ডিস্টিলারি থেকে অবৈধভাবে মদ বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মদের প্রতিটি ব্যারেল ভর্তির পর মুখে নিরাপত্তামূলক সিল লাগানো হয়। সিল সরিয়ে মুখ খোলা বা ব্যারেল কাটা ছাড়া মদ বের করার উপায় নেই।
কেরুর বর্তমান ও সাবেক একাধিক কর্মচারী এবং শ্রমিকনেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেরুর উৎপাদিত মদ চুরির ঘটনা বর্তমানে অনেকটাই গা সওয়া ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে অসংখ্যবার কেরুর তৈরি বাংলা মদ ও ফরেন লিকারসহ শ্রমিক-কর্মচারী ছাড়া বাইরের লোক ধরা পড়লেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেরুর সাবেক শ্রমিকনেতা ট্রাকচালক সাইফুল ইসলাম গত ৩০ আগস্ট রাতে কোম্পানির নিজস্ব পরিবহনে কেরুর ডিস্টিলারি থেকে দেশি মদ বা বাংলা মদ ড্রামে করে বরিশাল পণ্যাগারে নিয়ে যান। ৩১ আগস্ট রাতে গাড়ি নিয়ে কেরুতে ফিরে আসেন। যাওয়া-আসার পথে সাইফুল সঙ্গী হিসেবে জয়রামপুরের নজরুল ও কেরু হাসপাতালপাড়ার সুজন খানকে নিয়ে যান। নজরুল ও সুজন খান ড্রাম থেকে মদ চুরিতে পারদর্শী হিসেবে বেশ পরিচিত। চুয়াডাঙ্গা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে ড্রাম থেকে তাঁরা ১০০ লিটার মদ চুরি করে নিজেদের কন্টেইনারে লুকিয়ে রাখেন। বরিশাল থেকে বৃহস্পতিবার রাতে ফিরে ট্রাক কোম্পানির আখমাড়াই কারখানার ভেতরে রাখেন। রাত দুইটার দিকে তিনজন মিলে কন্টেইনারে করে ১০০ লিটার মদ নিয়ে প্রধান ফটক পার হয়ে পাচার করার সময় থানা–পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।