নারায়ণগঞ্জে ময়লার স্তূপে কাঁদছিল নবজাতক
সড়কের পাশে ময়লার স্তূপ। সেই স্তূপ থেকে ভেসে আসছিল অপরিচিত শব্দ। শব্দের উৎসের আশপাশে একটি কুকুর ঘুরছিল। বিপদগ্রস্ত বিড়ালছানা ভেবেই এগিয়ে গিয়েছিলেন তরুণ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন। বিড়ালছানা উদ্ধার করতে গিয়ে ইকবাল দেখলেন মুখ বাঁধা ফুটফুটে এক নবজাতক পড়ে আছে ময়লার স্তূপে। হাত-পা ছুড়ে সে কাঁদছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে এমন ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। পরে ওই শিশুকে উদ্ধার করে আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃসদন হাসপাতালের এনআইসিওতে ভর্তি করা হয়।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের হোড়গাঁও এলাকা থেকে এক ব্যবসায়ী একটি কন্যাশিশুকে উদ্ধার করেন। পরে ব্যবসায়ীর পরিবারের লোকজনই রাতভর শিশুটির দেখাশোনা করেন। সকালে খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে শিশুটির জন্ডিস ধরা পড়লে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর শিশু ও মাতৃসদন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এখনো শিশুটি শঙ্কামুক্ত নয় জানিয়ে ইউএনও বলেন, ‘উদ্ধারের সময় শিশুটির বয়স ছিল ১ থেকে ২ দিন। তার মাথা ও মুখ সাদা একটি ওভেন টিস্যু ব্যাগে বাঁধা ছিল। ব্যাগের মুখটি শক্ত করে বাঁধার কারণে গলা কেটে গেছে। শিশুটির মাথার পেছনে একটি ক্ষত আছে। ধারণা করা হচ্ছে, দূর থেকে ছুড়ে ফেলার সময় মাথায় আঘাত লেগেছে। এ ছাড়া ময়লার স্তূপে পড়ে থাকায় শিশুটির হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রচুর পোকার কামড়ের ক্ষত আছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মাথার আঘাত গুরুতর না হলে শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হবে।’
ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে ঘুমানোর আগে তিনি অজু করতে বের হয়েছিলেন। হঠাৎ তাঁর কাছে অপরিচিত একটি শব্দ ভেসে আসে। শব্দের উৎসকে ঘিরে তিনি একটি কুকুর ঘোরাফেরা করতে দেখেন। সোমবার রাতেও আমি এমন একটি শব্দ শুনেছি। একই জায়গায় পরপর দুই রাতে শব্দ শোনার পর আমি ভাবি কোনো বিড়ালছানা বিপদে পড়েছে। ভাবলাম বাচ্চাটাকে উদ্ধার করে ঘরে নিয়ে যাই। কিন্তু এগিয়ে গিয়ে দেখি ময়লার স্তূপে আবর্জনামাখা একটা মানবশিশু। হাত-পা ছুড়ে কাঁদছে। আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। নিষ্পাপ একটি শিশু এভাবে আবর্জনার স্তূপে পড়ে কাঁদছে আমার সেটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে দৌড়ে ঘরে যাই। পরে আমার মা ও বোনেরা এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে শরীর পরিষ্কার করে।’
এদিকে শিশু উদ্ধারের খবর পেয়ে অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে ছুটে আসছেন বলে জানান গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘অসংখ্য মানুষ শিশুটিকে দত্তক নিতে আসছেন। অনেকেই কান্নাকাটি করছেন। বলছেন, তাঁদের একটি সন্তান চাই। আমরা শিশুটির সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করছি। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’