সরকার কমালেও বেশি দামেই সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের
দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম গতকাল বৃহস্পতিবার ৭৬ টাকা কমিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে এখনো এ মূল্যহ্রাসের কোনো সুফল পাচ্ছেন না খুলনার ভোক্তারা। খুলনা নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পুরোনো দামেই সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে।
বিইআরসির নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মার্চে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪২২ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ৪৯৮ টাকা।
আজ শুক্রবার খুলনার বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কোম্পানিভেদে পার্থক্য আছে। ১২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, ভোক্তাদের কাছেও বেশি দাম নিতে হচ্ছে বলে দাবি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। আবার অনেক বিক্রেতা বলেছেন, গ্যাসের দাম কমানোর কথা তাঁরা জানেন না।
নগরের মিস্ত্রিপাড়া বাজার এলাকার গ্যাস বিক্রেতা মো. রাসেল বলেন, ‘আমরা বেশি দামেই গ্যাস কিনি। গতকাল গ্যাসের দাম ৭৬ টাকা কমেছে, তবে দেড় হাজার টাকার নিচে খুলনায় কোথাও গ্যাস বিক্রি হচ্ছে না, হবেও না।’ এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতা তো সেটাই বলে। এটাই সব সময় হয়ে আসছে। সরকারের নির্ধারণ করা দামের চেয়ে কোম্পানির দাম বেশি থাকে। তাই খুচরা বাজারেও দাম বেড়ে যায়।’
শহরের বি কে মেইন রোডের পাইকারি দোকান মেসার্স জুয়েল ট্রেডার্সের মালিক মো. নূর আলম বলেন, খুলনায় কয়েক সপ্তাহ আগে আরও বেশি দামে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছিল। তবে এখন সেটা কমে গেছে। এখন ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে। তবে গতকাল যে দামটা কমেছে, সেটা এখনো খুলনায় কার্যকর হয়নি।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মার্চে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪২২ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ৪৯৮ টাকা।
ওই দোকানে গ্যাস কিনতে আসা একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, ‘পাইকারি বিক্রেতা বা ডিলারদের ভাব এমন যে সরকার কমানোর আগেই তো তাঁরা দাম কমিয়ে দিয়েছেন। মাসখানেক আগে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হওয়া গ্যাস দেড় হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে—এটাই তো অনেক। সবশেষ যে ৭৬ টাকা কমানো হয়েছে, ওই দামে খুলনার কোথাও গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আমরাই বিশ্বাস করি না।’
নগরের খালিশপুর দৌলতপুর এলাকাতেও আগের দামেই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। খালিশপুর বিআইডিসি রোডের রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের গ্যাস বিক্রেতা মো. হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাম কমার কথা খবরে দেখছি, তবে আমাদের ডিলাররা এখনো আমাদের জানায়নি। আমরা আগের দামেই বিক্রি করছি।’ নগরের মুজগুন্নী বাস্তুহারা এলাকার গ্যাস বিক্রেতা মো. ফারুকও একই রকম কথা বলেন।
এদিকে সরকার গ্যাসের দাম কমানোর ঘোষণা কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। খুলনার টুটপাড়া এলাকার গৃহিণী মলিনা মণ্ডল বলেন, ‘গ্যাস মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। দাম বেশি লাগলেও কিনতে হচ্ছে। আমরা নিরুপায়। গ্যাসের দাম বাড়লে টের পাওয়া যায়। কমলে খুব একটা টের পাওয়া যায় না। আগে যে দামে কিনতাম, গতকাল রাতেও সেই দামেই কিনলাম। দাম কমার কথা দোকানদারকে জানালেও কোনো পাত্তা দিল না। দু-একদিন পরে হয়তো সিলিন্ডিারে ১০-১৫ টাকা কম রাখবে। তবে সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস কখনোই পাওয়া যাবে না বলে মনে হয়।’
খুলনা এলপিজি গ্যাস দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান সমস্যাই হচ্ছে, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কিনতে হয়। এ জন্য খুলনার বাজারে এখনো নতুন দাম কার্যকর হচ্ছে না। তবে জানুয়ারির শেষ দিক থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত খুলনায় বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাসের সরবরাহ অনেকটা কম ছিল। সরবরাহ কম থাকায় ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হচ্ছিল। এখন সরবরাহ অনেকটা স্বাভাবিক। ১ হাজার ৫১০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে।