দুই দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়, বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা
‘সকালে ভ্যানখান নিয়ে বাইর হইচু কুয়াশার তানে (জন্য) ১০ হাত দুরোতো দেখা যায়না। ঠান্ডাতে দেহাডা (শরীর) কাঁপেছে। কুয়াশায় মাথার চুল, চোখের ভ্রু—সব ভিজে যাছে। কিন্তু কী করিবেন, কামাই করে তো খাবা নাগিবে। পেট তো আর ঠান্ডা বুঝেনা।’
আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার শিংপাড়া এলাকায় দেখা হয় ভ্যানচালক শমসের আলীর (৫৫) সঙ্গে। শীতে জবুথবু হয়ে তিনি কথাগুলো বলছিলেন। কয়েক দিন ধরে পঞ্চগড়ে শীত জেঁকে বসায় বিপাকে পড়েছেন শমসের আলীর মতো খেটে খাওয়া মানুষ। রাতের ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল বাতাসে অনুভূত হচ্ছে হাঁড়কাপানো শীত। রাতভর টিপটিপ বৃষ্টির মতো ঝরছে ঘন কুয়াশা। এর রেশ থাকছে সকাল ১০টা পর্যন্ত।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, দুই দিন ধরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। আজ সকাল নয়টায় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গতকাল সোমবার সকাল নয়টায় তেঁতুলিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
পৌষের শুরু থেকেই উত্তরের এই জনপদে জেঁকে বসতে শুরু করে শীত। নামতে থাকে তাপমাত্রার পারদ। রাতে কুয়াশার সঙ্গে ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাস বাড়িয়ে দেয় শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশার কারণে আজ সকাল সাড়ে ১০টার পর সূর্যের দেখা মিলেছে। তবে রোদের তীব্রতা কম থাকায় এবং শীতল বাতাস বয়ে যাওয়ায় দুপুর বেলাতেও কাটেনি শীতের আমেজ। সকালের ঘন কুয়াশায় জেলার সড়কগুলোতে যানবাহন চালাতে বিপাকে পড়েন চালকেরা। দুর্ঘটনা এড়াতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলো চলতে দেখা গেছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তেঁতুলিয়ার আকাশের উপরিভাগে ঘন কুয়াশা আছে। এ জন্য রোদের তীব্রতা কম মনে হচ্ছে। এ ছাড়া উত্তরের হিমেল বাতাসে শীত অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মৌসুমের স্বাভাবিক একটি লঘুচাপ বর্তমানে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে তেঁতুলিয়ায় বৃষ্টিপাত না হলেও লঘুচাপটি কেটে গেলে এই এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ২২ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে জেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ করছে। সেই সঙ্গে শীতার্ত মানুষের জন্য কম্বল পেতে সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।