বিএনপির বহিষ্কৃত ও ছাত্রলীগ থেকে সরাসরি আ.লীগে, অধিকাংশই নতুন

আওয়ামী লীগের লোগো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দীর্ঘ সাড়ে ১৯ মাস পর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির অধিকাংশই নতুন। ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ৩৯ জনই এবার নতুন পদ পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রমসহ কোনো কমিটিতে না থাকা একাধিক শিক্ষক, চিকিৎসক, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতি করা দুজন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। জেলার এক সংসদ সদস্য ও প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের অনুসারীসহ দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কমিটিতে স্থান না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

২০২২ সালের ১২ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দুই সহসভাপতি মিলিয়ে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর গত বুধবার রাতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরে ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের এ কমিটির সভাপতি গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির। সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাঁকে ভারমুক্ত করা হয়েছে।

নতুন ও পুরোনো কমিটি ঘেঁটে দেখা গেছে, ৭৫ সদস্যের কমিটিতে ১১ জনকে সহসভাপতি, তিনজন করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ৩৬ জনকে কার্যনির্বাহী সদস্য করা হয়েছে। বাকি ২২টিতে একজন করে নেতা পদ পেয়েছেন। এর বাইরে ১৮ জনকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। নতুন পদ পাওয়া ৩৯ জনের মধ্যে ১৬ জন বিভিন্ন পদে এবং ২৩ জনই কার্যনির্বাহী সদস্য। আগের কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা সাতজন এবং কার্যনির্বাহী কমিটির ১৮ জন সদস্য বাদ পড়েছেন। এ ছাড়া পুরোনো কমিটির ১৬ জন নেতা মারা গেছেন। ১৮ জন উপদেষ্টার মধ্যে ১৭ জনই নতুন। আগের কমিটির ২১ জন উপদেষ্টার মধ্যে এবার ছয়জন বাদ পড়েছেন। ১০ জন প্রয়াত হয়েছেন।

১৬ পদে নতুন মুখ

পূর্ণাঙ্গ কমিটির ১৬টি পদে নতুন ব্যক্তিরা দায়িত্ব পেয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক ও ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকা ব্যক্তিরাও আছেন। তাঁরা হলেন সহসভাপতি পদে কামরুজ্জামান আনসারি, সোমেশ রঞ্জন রায় (আগের কমিটির উপদেষ্টা), সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক আবু সাঈদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক মফিজুর রহমান (বাবুল), কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এম বি কানিজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবদুল খালেক।

এ ছাড়া ধর্ম সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফারহানা সিদ্দিক, শিক্ষা ও মানবসম্পদ–বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক নুরুন্নাহার, শ্রম সম্পাদক মোশতাক আহমেদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক চিকিৎসক ডিউক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক তানজিল, উপদপ্তর সম্পাদক পদে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুজন দত্ত, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহ নতুন পদ পেয়েছেন।

সদস্য পদে যাঁরা নতুন

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম প্রথমবারের মতো জেলা কমিটির সদস্য হয়েছেন। তাঁরা আগের কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন।

এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবাদুল করিম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের ফরহাদ হোসেন, সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউপির চেয়ারম্যান আল আমিনুল হক, গণপূর্তমন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এইচ মাহবুব আলম, নজরুল ইসলাম, আবুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা আবু আব্বাস, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাইদুজ্জামান আরিফসহ ২৩ জন নতুন সদস্য পদ পেয়েছেন।

পদে রদবদল

আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নবীনগর পৌরসভার মেয়র শিব সংকর দাসকে নতুন কমিটিতে সদস্য পদে রাখা হয়েছে। আগের কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমানকে এবার সহসভাপতি, উপদেষ্টা থাকা সোমেশ রঞ্জন রায়কে সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মহিউদ্দিন খানকে সহসভাপতি, সদস্য কাজী হারিসুর রহমানকে সহসভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম ও আবদুল হান্নান এবং সদস্য তাসলিমা সুলতানা খানমকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, উপদপ্তর সম্পাদক মনির হোসেনকে দপ্তর সম্পাদক এবং দপ্তর সম্পাদক তানজিল আহমেদকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে।

বাদ পড়লেন যাঁরা

আগের কমিটির উপদেষ্টা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমানসহ প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের অনুসারীসহ দলের কিছু ত্যাগী নেতারা কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আগের কমিটির সহসভাপতি তাজ মো. ইয়াছিন ও মুজিবুর রহমান, শিক্ষা সম্পাদক জাকির হোসেন, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক শাহ আলম পদ পাননি।

এ ছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গণপূর্তমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ফিরোজুর রহমান, আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফা, সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী প্রয়াত হুমায়ূন কবীরের ভাই ফারুক আহমেদ, নাটাই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হক ভূঞা ও কাছন মিয়াকে নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি। তাঁদের অধিকাংশই প্রয়াত আল মামুন সরকারের অনুসারী ছিলেন।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টার পদ থেকে বহিষ্কৃত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানকে কমিটির উপদেষ্টা করা হয়েছে। ১৮ জন উপদেষ্টার মধ্যে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য আরমা দত্তের নাম ১ নম্বরে এবং সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের নাম ১৭ নম্বরে আছে।

নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির অন্তত চারজন নেতা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিটি মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক অমৃত লাল সাহা দলীয় কার্যক্রম বা কোনো কমিটিতে ছিলেন না। চিকিৎসক ডিউক চৌধুরীসহ তাঁদের কমিটিতে রাখায় দলসহ জেলায় সমালোচনা হচ্ছে। আবার ছাত্রলীগ থেকে দুজনকে সরাসরি আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখার বিষয়টিও নেতারা ভালোভাবে দেখছেন না। দলীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্যের কারণে তাঁরা পদ পেয়েছেন।