বগুড়ার গাবতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয়ে হামলা ও দুই কর্মচারীকে মারধরের ঘটনায় মামলা হলেও তিন দিনে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা গ্রেপ্তার হননি। পুলিশ বলছে, মামলার পর আসামিরা আত্মগোপন করায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। এদিকে হামলার ঘটনায় যুবলীগ নেতার সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে জেলা যুবলীগ।
ঠিকাদারি কাজের জামানত ফেরত দিতে দেরি করার অভিযোগ তুলে গত বুধবার দুপুরে গাবতলী এলজিইডি কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতা ও তাঁদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ সময় এলজিইডি কার্যালয়ের দুই কর্মচারীকে শার্টের কলার ধরে চেয়ার থেকে তুলে পেটানো হয়। হামলার শিকার দুই কর্মচারী হলেন এলজিইডি কার্যালয়ের হিসাব সহকারী রাজ্জাকুল হায়দার ও হিসাবরক্ষক ওয়াজেদ আলী।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রাজ্জাকুল হায়দার বাদী হয়ে গাবতলী মডেল থানায় ঘটনার পরদিন একটি মামলা করেন। গাবতলী পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ জামাল ওরফে শাজাহান এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে হামলা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলজিইডি কার্যালয়ের এক কর্মচারী প্রথম আলোকে বলেন, হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাঁদের ধরছে না। তবে গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, মামলার পর থেকে আসামিরা আত্মগোপন করেছেন। এ জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা শাহ জামাল এলজিইডির ১৩ লাখ টাকার দুটি প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ করেন। দুটি কাজের জামানত বাবদ দুটি চেকে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে শাহ জামাল সপ্তাহখানেক আগে জামানতের অর্থ ফেরত-সংক্রান্ত ফাইল খুঁজতে গাবতলী এলজিইডি কার্যালয়ে আসেন। তখন এলজিইডির হিসাব সহকারী রাজ্জাকুল হায়দার দুই নেতাকে এ–সংক্রান্ত ফাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ করতে বলেন। এতে দুই নেতা ক্ষিপ্ত হয়ে ফাইল হাজির করা না হলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান।
এজাহারে আরও বলা হয়, গত বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে ওই দুই নেতা সহযোগীদের নিয়ে এলজিইডি কার্যালয়ে হামলা করেন। তাঁরা প্রথমে হিসাবরক্ষক ওয়াজেদ আলীকে গালিগালাজ করেন। বাধা দিতে গেলে হিসাব সহকারী রাজ্জাকুল হায়দারের শার্টের কলার ধরে চেয়ার থেকে তুলে কিল-ঘুষি ও এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুতর আহত করেন। এ সময় হিসাবরক্ষক ওয়াজেদ আলীকেও পেটান এবং ফাইলপত্র তছনছ করেন।
মামলার বাদী রাজ্জাকুল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, আসামিরা সরকারি দপ্তরে হামলা চালিয়ে সরকারি কাজে বাধা ও প্রকাশ্যে আক্রমণ করেছেন। এ ঘটনায় মামলা হলেও এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ নেতা শাহ জামাল প্রথম আলোকে বলেন, এলজিইডির দুটি কাজে জামানতের ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। চেক ফেরত পেতে কর্মচারীরা হয়রানি করে আসছেন। গত বুধবার প্রকল্পের ফাইল খুঁজতে গেলে তাঁদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে। কার্যালয়ে হামলা বা কাউকে মারধরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এলজিইডির গাবতলী উপজেলা প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজসহ দপ্তরে হামলার সব রকম প্রমাণ আছে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ চাইলে সরবরাহ করা হবে।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, গাবতলী এলজিইডি কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তাঁর সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখতে জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে।