বগুড়া বাফার গুদামে আসা ১ হাজার ৯৬০ বস্তা টিএসপি সার নকল

বগুড়ায় বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের গুদামে আসা ২৩৮ মেট্রিক টন টিএসপি সারের চালান খালাস করা হয়নি
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ায় বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) গুদামে খালাসের আগে আটকে দেওয়া ২৩৮ মেট্রিক টন ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সারের চালানের মধ্যে প্রথম দফায় আসা ১ হাজার ৯৬০ বস্তা টিএসপি সার নকল। রাজশাহী মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বগুড়ায় বাফার গুদামে প্রতিবেদনটি পৌঁছায়।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৩ জনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১২)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বগুড়া শহরের তিন মাথা রেলগেট এলাকায় বাফার গুদাম চত্বর থেকে তাঁদের আটক করা হয়।  র‌্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের স্পেশাল কোম্পানির অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মবিন খান বলেন, আটক ব্যাক্তিরা চট্টগ্রাম টিএসপি কমপ্লেক্স কারখানা থেকে এসব নকল সার বগুড়ায় বাফার গুদামে খালাসের জন্য ট্রাকে বহন করে এনেছিলেন। তাঁরা সবাই ট্রাকচালক এবং তাঁদের সহকারী। নকল সার খালাস চেষ্টার দায়ে পরিবহন ঠিকাদারের বিরুদ্ধেও মামলা হবে।

বগুড়া জেলা সার ও বীজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় প্রথম আলোকে বলেন, বাফার গুদামে খালাসের আগে আটকে দেওয়া ৪ হাজার ৭৬০ বস্তা বা ২৩৮ মেট্রিকটন সারের মধ্যে প্রথম দফায় ৭ ট্রাকে ৯৮ মেট্রিক টন সারের চালান এসেছিল। নকল সন্দেহে এই সার খালাস আটকে দেওয়া হয়। প্রথম চালানের সারের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ চন্দ্র সরকারের নেতৃত্বে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য রাজশাহী মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষার পর এই সার নকল বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহষ্পতিবার এই প্রতিবেদন হাতে পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, দ্বিতীয় দফায় আরও ১০ ট্রাকে ১৪০ মেট্রিক টন বা ২ হাজার ৮০০ বস্তা টিএসপির চালান খালাসের জন্য আসে। এসব সারও ট্রাক থেকে খালাসের সময় তা নকল সন্দেহ হয়। এসব সারের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য টিএসপি কমপ্লেক্সে কারখানার নিজস্ব ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো প্রতিবেদন আসেনি। প্রতিবেদন হাতে পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নকল সার সরবরাহের চেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে টিএসপি কমপ্লেক্স সার কারখানা কর্তৃপক্ষ মামলা করবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

খালাসের আগেই জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ আসে, ট্রাকে পাঠানো সারের চালান বগুড়ায় পৌঁছানোর আগেই পথে বস্তা পরিবর্তন করে ভেজাল সার ট্রাকে তোলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত টিএসপি কমপ্লেক্স সার কারখানা থেকে গত রোববার ও সোমবার দুই দফায় ১৭টি ট্রাকে টিএসপি সার বগুড়া বাফার গুদামে খালাসের জন্য পাঠানো হয়। তবে নকল সারের চালান পাঠানো হয়েছে, এমন অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক ওই সার গ্রহণ না করে গুণগত মান পরীক্ষার নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় টিএসপি কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে উপপ্রধান রসায়নবিদ রেজাউল হক, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মাজহারুল ইসলাম ও সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আওয়াল হোসেনের সমন্বয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। গত মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি বগুড়ায় এসে সারের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান।

বিসিআইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিএসপি সারের এই চালানের পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স এমএইচআর। খালাসের আগেই জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ আসে, ট্রাকে পাঠানো সারের চালান বগুড়ায় পৌঁছানোর আগেই পথে বস্তা পরিবর্তন করে ভেজাল সার ট্রাকে তোলা হয়েছে।