সিলেট, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ভারী বৃষ্টিতে সড়কে হাঁটুপানি
জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েন রাস্তার পথচারী ও শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার এলাকাবাসী।
সিলেটে গতকাল রোববার বিকেলে প্রায় তিন ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এই ৩ ঘণ্টায় ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এতে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় নজরুল অ্যাভিনিউতে প্রায় হাঁটুসমান পানি জমেছে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। শহরের বিভিন্ন রাস্তার কোথাও গোড়ালিসমান, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে। এই জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েন রাস্তার পথচারী ও শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার এলাকাবাসী।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সিলেটে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় ৬২ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫১ মিলিমিটার। এর আগে গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
আবহাওয়া কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে ভারী বৃষ্টিপাত হিসেবে ধরা হয়। এ ছাড়া সেটি ৮৯ মিলিমিটার অতিক্রম করলে অতিভারী বৃষ্টিপাত ধরা হয়। এর আগে গত ২ জুলাই সিলেটে ৩ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
সিলেটে বৃষ্টিপাতের কারণে বাসিন্দা এবং পথচারীরা কিছুটা ভোগান্তি পোহালেও অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, কদিন আগে অসহ্য গরমের কারণে টেকা দায় হয়ে গিয়েছিল। গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গিয়ে ঘন ঘন লোডশেডিং দেখা দিচ্ছিল। কদিন আবহাওয়া ঠান্ডা থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে।
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, সকালে ঘর থেকে ছাতা না নিয়ে বেড়িয়েছিলেন। বিকেলের দিকে তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেড়িয়ে ঝুম বৃষ্টি দেখতে পান। এ সময় জরুরি কাজ থাকায় অনেকটা ভিজেই পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকায় গন্তব্যে যেতে হয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
এদিকে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুমিল্লায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন ভূঁইয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কান্দিরপাড় পুবালী চত্বর থেকে কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার পর্যন্ত অন্তত ১০০ মিটার সড়ক। এ সড়কের দুই পাশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, ব্যাংক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা এই সড়কে চলাচল করতে চান না।
জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঞ্জুর কাদের। ভোগান্তি নিরসনে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।
নগরের পশ্চিম বাগিচাগাঁও এলাকা থেকে কান্দিরপাড়ের ভাড়া ৩০ টাকা। ট্রমা সেন্টার পর্যন্ত আসার পর জলাবদ্ধতা দেখে অটোরিকশাচালক আর যেতে চাননি। বৃষ্টির কারণে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাজমুল হাসান চালককে ৪০ টাকা দেন। পরে কান্দিরপাড় মোড়ে অটোরিকশায় আসেন ১০ টাকা দিয়ে।
নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, পানি জমে একাকার অবস্থা। এতে বেড়েছে ভোগান্তি।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েম ভূঁঞা বলেন, এই সড়কের সংস্কারকাজের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন কাজ করছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তা পানিতে তলিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল, জেলা পরিষদ মার্কেট, কালীবাড়ি মোড়, টিএরোড, কাজীপাড়া, জেলা ঈদগাহ ময়দানের সামনের রাস্তা, সরকারপাড়া, হালদারপাড়া, টেংকেরপাড়, সিও অফিস-পীরবাড়ি সড়ক, পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড, কুমারশীল মোড়সহ একাধিক এলাকার রাস্তায় পানি জমে। পানি নামতেও দীর্ঘ সময় লেগে যায়। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় পার হলেও জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। বৃষ্টি হলেই মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হয়। আধা ঘণ্টার বর্ষণে শহরের বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল, কাউতলী থেকে মেড্ডা পর্যন্ত শহরের একমাত্র প্রধান সড়কের জেলা পরিষদ মার্কেট, কালীবাড়ি মোড়, টিএরোড, কুমারশীল মোড়, পুরাতন জেল রোডের টেংকের পাড়, হালদারপাড়ার অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের এলাকা, বোর্ডিং মাঠ এলাকা, কাজীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজ, সূর্যমুখী কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। নালার ময়লা ও আবর্জনার সঙ্গে মিশে রাস্তার বৃষ্টির পানি অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে।
কলেজশিক্ষক এমরান হোসেন বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় তৃতীয় শ্রেণির সেবাও যদি পেতাম, ভালো লাগত। কিন্তু এটি নোংরা শহরের রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। নাগরিক সেবার কিছুই পাচ্ছি না।’
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কাউসার আহমেদ বলেন, বৃষ্টি হলে পানি সরতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। কারণ, দোকান, ফ্যাক্টরি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির থেকে ফেলা ময়লা-আবর্জনায় অধিকাংশ নালা ভরে গেছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, প্রতিনিধি, সিলেট]