অন্যান্য দিনের মতো গত রোববার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের লাউহাটি বাজারে নিজের স্টেশনারি দোকানে কাজ করছিলেন হাসমত আলী খান। তখন খবর পান, একটি মহিষ এসেছে তাঁদের এলাকায়। যাঁকে সামনে পাচ্ছে, তাঁকেই আক্রমণ করছে। দোকান ফেলে তিনি মানুষকে রক্ষা করতে ছুটে যান। সেখানে মহিষের আক্রমণের শিকার হন। পরে গতকাল সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
হাসমত আলী খান উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি তারুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক বলেন, হাসমত তাঁকে ফোন করে মহিষের আক্রমণের কথা জানান। এ ব্যাপারে পুলিশ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। এর মধ্যে মানুষের যাতে ক্ষতি না হয়, সে জন্য তিনি মহিষটির আশপাশেই অবস্থান করছিলেন। মানুষকে সতর্ক করছিলেন। এর মধ্যে হঠাৎ তাঁকেই আক্রমণ করে বসে মহিষটি।
হাসমত আলীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তাঁর স্বজন ও এলাকার মানুষ। এই মহিষের আক্রমণে হাসমত আলী ছাড়াও হাজেরা বেগম ও কিতাব আলী নামের দুজন মারা গেছেন। তাঁদের মৃত্যুতে এলাকার সবাই শোকাহত।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, গত রোববার পার্শ্ববর্তী বারোপাখিয়া গ্রামের শরীফ মিয়ার মহিষ হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। যাঁকে সামনে পায়, তাকেই গুঁতা দিতে থাকে। মহিষের আক্রমণে শরীফ মিয়া আহত হন। একপর্যায়ে মহিষটিকে স্থানীয় লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া করেন। পরে মহিষটি লাউহাটি এলাকায় চলে আসে। সেখানেও মানুষের ওপর আক্রমণ শুরু করে।
লাউহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন মোহাম্মদ খান বলেন, মহিষের আক্রমণে ১০–১২ জন আহত হন। এর মধ্যে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারুটিয়া গ্রামের আজগর আলীর স্ত্রী হাজেরা বেগম (৪২) রোববার বিকেলে মারা যান। সোমবার রাতে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাসমত আলী (৫৭)। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বারোপাখিয়া গ্রামের কিতাব আলীর অবস্থার অবনতি হয় সোমবার রাতে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
রাতেই হাসমত আলী ও কিতাব আলীর লাশ বাড়িতে আনা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁদের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে। লাউহাটি বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রেখে কালো ব্যাচ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করে শোক পালন করে।
লাউহাটি গ্রামের মোস্তফা কামাল বলেন, মহিষের আক্রমণে তিনজনের মৃত্যু, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত!
হাসমত আলী খানের ছেলে স্বাধীন খান বলেন, ‘মহিষের আক্রমণে আমার বাবার এভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। তিনি মানুষকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন।’
দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন সারোয়ার বলেন, মহিষের আক্রমণের খবর পাওয়ার পর প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। দলটি ঢাকা থেকে এসে মহিষকে অচেতন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তার আগেই স্থানীয় লোকজন মহিষটিকে হত্যা করে।