সাঁথিয়ায় উৎপাদন কম হলেও পাটের দামে খুশি কৃষক

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে পাট বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি তোলা
ছবি প্রথম আলো

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় এবার পাটের উৎপাদন কম হয়েছে। পাট চাষে খরচও হয়েছে বেশি। তবে বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় পাটচাষিরা এবার লাভবান হয়েছেন। এতে পাটচাষিদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর এই সময়ে প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছিল। এতে কৃষকদের প্রতি মণে ৫০০ টাকার মতো লোকসান হয়েছিল। কিন্তু এবার প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকায়। এতে কৃষকদের এবার প্রতি মণে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হচ্ছে।

গত বছর প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ ছিল ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এবার প্রতি মণের উৎপাদন খরচ আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা।

কৃষকেরা আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পাট চাষের খরচ প্রতি মণে ২০০ টাকার মতো বেড়েছে। এ ছাড়া খরার কারণে এবার পাটের ফলনও কম হয়েছে। গত বছর প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ ছিল ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এবার প্রতি মণের উৎপাদন খরচ আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। ফলন কম ও উৎপাদন খরচ বেশি হলেও পাটের দাম ভালো হওয়ায় কৃষকেরা এবার লাভের মুখ দেখছেন।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে পাট বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পাটের আবাদে লোকসান হওয়ায় এবার কৃষকদের মধ্যে পাট চাষে আগ্রহ কিছুটা কম ছিল। অনেক কৃষকই পাট চাষ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ পর্যন্ত পাটের আবাদ করেছেন। এ অবস্থায় গত বছরের তুলনায় সাঁথিয়ায় এবার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ কম হয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় ৭ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আর এবার পাটের আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাটের আবাদ করতে গিয়ে এবার নানাভাবে বিড়ম্বনায় পড়েছেন পাটচাষিরা। আবাদের সময় খরার কারণে পাটগাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাটকাটা মৌসুমের শুরুতে পানির অভাবে অনেক কৃষক পাটখেতের কাছে পাট জাগ দিতে পারেননি। তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এ ছাড়া এবার পাট আবাদের মৌসুমে বেশি মজুরিতে শ্রমিক নিয়ে কাজ করাতে হয়েছে। এর আগে ৬৫০ টাকা দিন চুক্তিতে শ্রমিক পাওয়া গেলেও এবার ৮০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া এবার বিঘাপ্রতি ফলন কিছুটা কম হওয়ায় গড়ে ৯ মণ ফলন পাওয়া গেছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে।  

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার সোনাতলা গ্রামে ইছামতী নদীতে পাটের আঁশ পরিষ্কার করছেন কৃষকেরা। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

উপজেলার সোনাতলা গ্রামে ইছামতী নদীতে পাটের আঁশ পরিষ্কারের সময় শরিষা গ্রামের পাটচাষি সবুজ আলী বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করিছিল্যাম। সব মিলায়া ২৫ মণের মতো ফলন পাওয়ার আশা করিছি। এরই মধ্যে ৩ হাজার টাকা মণ দরে ১০ মণ পাট বেচছি। গত বছর লস খায়া মনে করছিল্যাম এবার আর পাটের আবাদ করব না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবাদ কইর‌্যা লাভের দেখা পাইছি।’

 শুক্রবার সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রচুর পাট উঠেছে। এসব পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা মণ দরে। এই দামে পাট বিক্রি করে খুশি চাষিরা।

হাটে পাট কিনতে আসা পাট ব্যবসায়ী শামসুল হক বলেন, ‘গত বছর কম দামে পাট বিক্রি হলেও এবার পাটের বাজার বেশ ভালো। এই বাজারে কৃষক ও ব্যবসায়ী দুই–ই খুশি। এবার এ এলাকায় পাটের ফলন খারাপ না হলে কৃষকের লাভ আরও বেশি হতো।’
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘এবার আবাদ কিছুটা কম হলেও ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে কৃষকেরা বেশি জমিতে পাট চাষে আগ্রহী হবেন বলে আশা করছি।’