ব্রহ্মপুত্রপাড়ে গণশৌচাগার নির্মাণে ক্ষুব্ধ নাগরিকেরা, প্রতিবাদ
ময়মনসিংহ নগরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে নেওয়া প্রকল্পের আওতায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গণশৌচাগার নির্মাণ করছে সিটি করপোরেশন। জনবহুল প্রয়োজনীয় স্থানে শৌচাগার নির্মাণ না করে ব্রহ্মপুত্রপাড়ে গণশৌচাগার নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা দ্রুত শৌচাগারের নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
নগরের জুবিলিঘাটে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ব্রহ্মপুত্র নদের বেড়িবাঁধের ভেতরে একটি গণশৌচাগার তৈরি করছে সিটি করপোরেশন। নদের মধ্যে গণশৌচাগার নির্মাণ, দখল দূষণ ও অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ব্রহ্মপুত্র নদ সুরক্ষা আন্দোলন। আজ বুধবার সকালে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এর প্রতিবাদ জানায়।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি সরবরাহ প্রকল্পটি ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন দেয়। ১২২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে ৩৫টি গণশৌচাগার নির্মাণ করার কথা। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির সময় তৎকালীন কাউন্সিলররা জায়গা নির্ধারণ করলেও সেখানে কাজ করতে গিয়ে নগরবাসীর বাধার মুখে পড়ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে যেনতেন কাজ করে সিটি করপোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জুবিলিঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্রপাড়ে গণশৌচাগারের নির্মাণকাজ শুরু হলে নগরবাসীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার সেখানে যান ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদের নেতৃত্বে একটি দল। তারা ব্রহ্মপুত্র নদের অংশে গণশৌচাগার নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা অপসারণের আহ্বান জানায়। এ সময় আবুল কালাম প্রকল্প পরিচালক জীবন কৃষ্ণ সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে নদীতে শৌচাগার কীভাবে হচ্ছে জানতে চান। কাজ বন্ধ না করলে প্রয়োজনে আদালতে মামলা করারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, রাষ্ট্র নিজেরাই বেআইনি কাজ করছে। নদীতে শৌচাগার করে নদী আরও দখল হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। যে স্থানে এটি করা হচ্ছে, সেখানে এটির কোনো ব্যবহারকারী নেই।
৩৫টি গণশৌচাগার, ২০টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) ও ২০০ ডাস্টবিন নির্মাণের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। কিন্তু কাজ বাস্তবায়নে তাঁরা বাধার মুখে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. তানিম হোসেন। তিনি বলেন, ৩৫টি গণশৌচাগারের মধ্যে ২০টির কাজ শুরু হলেও পাঁচটির কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। একটি এসটিএসের কাজ শুরু হয়েছে। ডাস্টবিন করার জন্য প্রকল্পে যেসব জায়গা নির্ধারণ করা, সেখানে কাজ করতে দিচ্ছেন না লোকজন। সিটি করপোরেশনও সঠিকভাবে জায়গা দিতে পারছে না। এতে তাঁরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম মিঞা দাবি করেন, ডিপিপিতে প্রকল্পের স্থান উল্লেখ করেই প্রকল্প অনুমোদন হয়। প্রকল্প প্রস্তুতের সময় স্থানীয় কাউন্সিলররা জায়গা নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা না থাকায় বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে।
নগরের হাড়গুজিরপাড় এলাকায় পাকা সড়ক ঘেঁষে আবাসিক এলাকায় একটি গণশৌচাগার নির্মাণ করতে মালামাল নিয়ে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে সড়ক সংকুচিত হবে এবং দুর্গন্ধ ছড়াবে দাবি করে স্থানীয় লোকজন কাজ বন্ধ করে দেন।
স্থানীয় আবদুল হালিম, ইমরান হোসেন ও আবদুল কাদির বলেন, মানুষের জন্য সরকার কাজ করে। শৌচাগার তাঁদের প্রয়োজন কি না, কেউ জানতে চাইল না। সবার বাড়িতে শৌচাগার আছে। এখানে শৌচাগারের দরকারই নেই। যেখানে বাইরে থেকে মানুষ আসে, হাটবাজার—সেখানে শৌচাগার করলে মানুষ উপকৃত হবে। তা না করে তাঁদের বাড়ির সামনে শৌচাগার করতে শুরু করেছে, যা শুধু অপচয়।
ময়মনসিংহ মহানগর সুজনের সম্পাদক আলী ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, নদ–নদী পবিত্র জায়গা। সেখানে শৌচাগার নির্মাণের মতো নির্বোধ কাজ যারা করছে, অর্থ লোপাটের পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।
প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন
ব্রহ্মপুত্রপারে গণশৌচাগার নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, আইনে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন নদী-খাল ও জলাশয়ে উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। অতীতে ময়মনসিংহ শহরের কাচারিঘাটে ব্রহ্মপুত্রের বুকে বিসর্জনের পাকা ঘাট ও ব্রহ্মপুত্রের মাঝবরাবর সড়ক তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে সেই কাজ বন্ধ হয়। এখন নতুন করে ব্রহ্মপুত্রের বুকে একাধিক গণশৌচাগার নির্মাণকাজ করছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। তিনি এই বেআইনি ও প্রকৃতিবিরোধী ঘৃণ্য কাজের নিন্দা জানান।
একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে গণশৌচাগারের নির্মাণকাজ বন্ধ, প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। এতে অন্যান্যের মধ্যে কবি সরকার আজিজ, চিত্রশিল্পী হোসাইন ফারুক ও ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্যসচিব আশকর আলী বক্তব্য দেন।