বাসরঘরে বরকে বসিয়ে রেখে দেনমোহরের টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

ফুলশয্যার জন্য হোটেলকক্ষ ভাড়া করে নববধূর জন্য অপেক্ষা করছিলেন বর। অন্যদিকে দেনমোহরের টাকা বাসায় রেখে আসার কথা বলে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন নববধূ। ঘটনার চার দিন পর নববধূ তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে দেন। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহী নগরীতে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বর থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। পুলিশ বলছে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।

দেনমোহরের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া নববধূর নাম তামান্না আক্তার ওরফে ফেন্সি (৩১)। ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম মোস্তাফিজুর রহমান (৫৮)। তিনি নগরের পদ্মা আবাসিকের বাসিন্দা। গ্রামের বাড়ি নওগাঁ। গত ২৯ নভেম্বর এ ঘটনায় তিনি নগরের চন্দ্রিমা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তামান্না আক্তার। তাঁর বাড়ি নগরের মেহেরচণ্ডী পূর্বপাড়ায়। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের মশক শাখার মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করেন তিনি।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী অসুস্থ। তাই তিনি দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবছিলেন। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়েছেন কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নেননি। কিন্তু এই বিয়ের ব্যাপারে সে সবই জানে। আপত্তি করবেন না।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তামান্না আক্তারের বিবাহবিচ্ছেদ হয় ১৪ বছর আগে। ১৩ বছর বয়সী তাঁর একটি মেয়ে আছে। বছর দু-এক আগে পরিচয়ের পর তামান্নাকে ভালো লেগেছিল তাঁর। এ জন্য তিনি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

চার লাখের বেশি টাকা দিয়েছেন দাবি করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেনমোহরের ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা তিনি নগদ পরিশোধ করেছেন। বাজার করার জন্য ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এমনকি বাড়ির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার জন্যও টাকা নিয়েছেন। সব মিলিয়ে তাঁর কাছ থেকে চার লাখ টাকার কিছু বেশি নিয়েছেন। দেনমোহরের টাকা নিয়ে বাড়িতে রাখতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তিনি চার দিন অপেক্ষার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ লাখ টাকা দিলে তামান্না আমাকে বিয়ে করবে এমন শর্ত দিয়েছিল। এ টাকায় সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারে দোকান করতে চান। তার প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে যাই। এরপর গত ২০ নভেম্বর রাতে তামান্না আমাকে মেহেরচণ্ডী এলাকার একটি কাজি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে আমি নগদ ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে করি। বিয়ের পর শহরের একটি তিন তারকা হোটেলে ফুলশয্যার কথা ছিল। বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রী আছে এই জন্য আমি হোটেলে ফুলশয্যা করতে চেয়েছিলাম। ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে হোটেলে রুম ভাড়া করেছিলাম। তামান্না বাড়ি যাওয়ার পর অসংখ্যবার ফোন দিলেও সে আমার ফোন ধরেনি।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিয়ের চার দিন পর তামান্নার পাঠানো তালাকের নোটিশ হাতে পেয়েছেন। তামান্না এই তালাকে সই করেছেন। মোস্তাফিজুর দাবি করেন, এখন তিনি শুনতে পাচ্ছেন যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তামান্নার ব্যবসা।

যোগাযোগ করা হলে তামান্না আক্তার বলেন, ‘ভাই, ঘটনাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে আর ঝামেলা করবেন না। আমার খুব অশান্তি লাগছে।’

নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একজন অফিসারকে এ ঘটনা তদন্ত করতে দিয়েছেন। যতটুকু জানা গেছে, ঘটনা সত্য। তবে একটা মেয়ে বিয়ে করতেও পারেন, আবার তালাকও দিতে পারেন। এখন দেখা যাক তদন্ত শেষে কী দাঁড়ায়, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।