ইনানী সৈকতের জেটি উচ্ছেদ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জাহাজ চলাচল বন্ধের দাবি

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকতে নির্মিত জেটি। ঘূর্ণিঝড় দানার সময় বার্জের ধাক্কায় জেটির মধ্যভাগের অংশ ভেঙে দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়েছেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়ায় ইনানী সৈকতে নির্মিত জেটি উচ্ছেদ ও প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। আজ রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি পাঠানো হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে।

স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন বাপা কক্সবাজার শাখার সভাপতি এইচ এম এরশাদ, সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম অখণ্ডিত সমুদ্রসৈকত। এটি বাংলাদেশি প্রত্যেক মানুষের গর্বের ঐতিহ্য। অথচ প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এই সৈকতকে দ্বিখণ্ডিত করে ২০২১ সালে ইনানী সৈকতে (হোটেল রয়েল টিউলিপের সামনে) অপরিকল্পিতভাবে  একটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক একটি মহড়ার জন্য এই জেটি নির্মাণ করা হয়েছিল। গত বছর থেকে এই জেটি ব্যবহার করে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির জাহাজ সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক পারাপারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা ছাড়া দেশের প্রচলিত আইন ও ইসিএ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে জেটিটি নির্মাণ করা হয়। জেটি নির্মাণের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে কক্সবাজারবাসীর পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা করা হয়। হাইকোর্ট কেন এই জেটি অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হবে না মর্মে রুল জারি করেন, যা এখন নিষ্পত্তির জন্য (পেন্ডিং) আছে। জেটি উচ্ছেদের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বাপা সভাপতি এইচ এম এরশাদ বলেন, জেটিটি ইনানী সমুদ্রসৈকতের মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে সৈকত দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়েছে। সেখানে পর্যটকের সমাগম বৃদ্ধি এবং যানবাহনের চলাচল শুরু হওয়ায় বালুচরে লাল কাঁকড়ার বিচরণ, বিলুপ্ত প্রজাতি কচ্ছপের ডিম পাড়ার জায়গা এবং ডলফিনের বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

বাপা সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ বলেন, এই জেটি দিয়ে সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ চলাচল করায় ঝুঁকিতে পড়েছে ডলফিন-হাঙরসহ সামুদ্রিক প্রাণী। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজের প্রফেলারের আঘাতে অনেক ডলফিন মারা যাচ্ছে। তা ছাড়া জেটির কারণে সমুদ্রের ঢেউ চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে বালিয়াড়িতে ও মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাচ্ছে। তাই এই জেটি ভেঙে ফেলতে হবে।

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় দানার আঘাতে জেটির মধ্যভাগের কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে। এ জেটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পর্যটক পারাপারের জন্য নিরাপদ নয় জানিয়ে বাপার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, যেখানে একটি বার্জের ধাক্কায় জেটির মূল অংশ ভেঙে যায়, সেখানে জাহাজের ধাক্কা লেগে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন পর্যটকেরা।