চট্টগ্রামে আইনজীবীদের বিক্ষোভে অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এক আইনজীবী। তাঁর নাম নেজাম উদ্দীন। আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটেছে।
আইনজীবীদের অভিযোগ, একজন সরকারি কৌঁসুলি হয়ে নেজাম উদ্দীন পুলিশের ওপর হামলা ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার সঙ্গে জড়িত আসামিদের পক্ষে আদালতে ওকালতনামা দিয়েছেন। নেজাম উদ্দীন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভূঁইয়ার জুনিয়র। এ কারণে তাঁরও পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। পরে ওকালতনামাও প্রত্যাহার করেন ওই আইনজীবী।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানান, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ১৭ আসামিকে আজ সকালে কারাগার থেকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়।
এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় আট আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। সেখানে দুই আসামি মোহাম্মদ দেলোয়ার ও মোহাম্মদ নুরুর আইনজীবী হিসেবে ওকালতনামা দেন নেজাম উদ্দীন। বিষয়টি জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা বেলা আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় মহানগর সরকারি কৌঁসুলি কার্যালয়ে সামনে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা ওই সময় মহানগর পিপি ও অতিরিক্ত পিপি নেজাম উদ্দীনের পদত্যাগ দাবি করেন।
তখন নেজাম উদ্দীন মহানগর পিপির কার্যালয়ে ছিলেন। তাঁকে সেখানে অবরুদ্ধ করে রাখেন আইনজীবীরা। পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা এসে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের থামান। শেষে নেজাম উদ্দীন অতিরিক্ত মহানগর সরকারি কৌঁসুলির পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন।
জানতে চাইলে নেজাম উদ্দীন আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র। আমি জানতাম না এই আসামিদের জন্য ওকালতনামা নিয়েছে।’
তবে জুনিয়র ওকালতনামা দেওয়া প্রসঙ্গে কিছু জানেন না জানান মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া। আজ বিকেলে আদালত প্রাঙ্গণে তিনি বলেন, আইনজীবীদের দাবি মতো পদত্যাগ করেছেন নেজাম উদ্দীন। তাঁর পদত্যাগ দাবি প্রসঙ্গে মফিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার কিছু করার নেই।’
আজ বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে মহানগর পিপির পদত্যাগ ও পদ থেকে বাদ দেওয়ার জন্য গণস্বাক্ষর নিতে দেখা গেছে আইনজীবীদের। এটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আইনজীবী হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় চট্টগ্রাম বারের কোনো আইনজীবীকে অংশ না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও একজন আইনজীবী দুই আসামির পক্ষে ওকালতনামা দেওয়ায় আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। পরে ওই আইনজীবী তাঁর ওকালতনামা প্রত্যাহার করে নেন। একই সঙ্গে এপিপির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তাঁর অনুসারীরা। তাঁরা প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় আইনজীবীদের গাড়ি ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে মিছিল বের করেন কিছু আইনজীবী।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মিছিল শেষে ফেরার পথে হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান সাইফুল। তখন তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও চারটি মামলা হয়। তিনটি করে পুলিশ, আরেকটি করে নিহত ব্যক্তির ভাই জানে আলম। পাঁচ মামলায় গ্রেপ্তার হন ৩৯ জন।