ধোবাউড়ায় সার কেলেঙ্কারিতে জড়িত অভিযোগে বিএনপি নেতা ও কৃষি কর্মকর্তার বিচার দাবি
কৃষকের জন্য বরাদ্দ বিনা মূল্যের প্রণোদনার সার ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার বিএনপি নেতা ও ডিলার মাজহারুল আহসানের গুদামে পাওয়ার ঘটনায় নানা আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই সার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে মাজহারুল ও কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ারের বিচার দাবিতে গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
অভিযুক্ত মাজহারুল আহসান ধোবাউড়া থানা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ। বর্তমানে এলাকায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও দলীয় কোনো পদ নেই।
গতকাল দুপুরে ধোবাউড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৬ নভেম্বর মাজহারুল আহসানের গুদামে সরকারি প্রণোদনার ৩১৫ বস্তা সার সিলগালা করে উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিএনপির নাম জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে অভিযুক্ত মাজহারুল আহসান উপজেলা বিএনপির কেউ নন। বিএনপি নেতাদের নামে গায়েবি মামলা হলেও মাজহারুল আহসানের নামে কোনো মামলা হয়নি; বরং তিনি আওয়ামী দুঃশাসনের সময় দাপটের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে সারের ডিলার ও বিএনপি নেতা মাজহারুল আহসান বলেন, ‘মাঠে চাহিদা থাকলেও আমার গুদামে এমওপি সারের সংকট ছিল। এ খবর জেনে কৃষি কর্মকর্তা এক ট্রাক সার আমার গুদামে পাঠিয়ে দেন। আমি তখন কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলাম। নিজের বরাদ্দ উত্তোলনের পর সমপরিমাণ সার কৃষি কর্মকর্তাকে দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। আমার গুদামে সার রাখলেও পরে প্রকৃত কৃষকদের স্লিপ দিয়ে সার তুলে নিতেন কৃষি কর্মকর্তা। আমি কৃষি কর্মকর্তার কাছে এখনো সাত লাখ টাকা পাই, যা দীর্ঘদিনে জমেছে। অফিসে সার রাখলে উনি (কৃষি কর্মকর্তা) অনেক ঝামেলায় থাকেন। আমার এখান থেকে কৃষকদের সার দিতে সহজ হয়।’
এ ঘটনায় ৭ নভেম্বর উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি)। তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজিম উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গতকাল তদন্তকাজ সম্পন্ন করেছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাছরিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। লিখিত ব্যাখ্যায় কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভুল করে ডিলারের গুদামে সারগুলো চলে যায়। ডিলারের এক ট্রাক সার আসার কথা ছিল, পরবর্তী সময়ে সেই সার সরকারি গুদামে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে তাঁদের একজন প্রতিনিধি ছিলেন। তদন্তকাজ শেষ হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।