চুয়াডাঙ্গায় খাতা কেড়ে নেওয়ার ক্ষোভে শিক্ষককে পেটাল ছাত্র
চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি.জে) সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমানকে পিটিয়েছে দশম শ্রেণির এক ছাত্র। অভিযুক্তের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষকেরা আজ সোমবার সকালে ক্লাস বর্জন ও দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন। তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করছেন। অভিযুক্ত ছাত্রকে গ্রেপ্তারে প্রশাসনকে দুই দিন সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান বলেন, শিক্ষক হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে আজ সকালে অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় সরকারি কর্মচারীকে সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও মারপিটের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন আক্তারকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান লালন, জেলা শিক্ষা কমর্কর্তা আতাউর রহমান ও ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমান।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে ছাত্রের মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। শ্রেণিকক্ষে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে, শিক্ষক হাফিজুর রহমান অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর খাতা কেড়ে নেন। এর কিছুক্ষণ পর খাতা চেয়ে ফেরত না পেয়ে শিক্ষকের গালে দুটি চড় মারে শিক্ষার্থী।
এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ছাত্রকে নির্বাচনী সব পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত রোববার এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষককে মারপিটের এ ঘটনা ঘটে। একই কক্ষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অন্য শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বলে, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে শিক্ষক হাফিজুর রহমান অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর খাতা কেড়ে নেন। ওই শিক্ষার্থী খাতা ফেরত চায়। শিক্ষক খাতা ফেরত দেননি। এই ক্ষোভে ওই শিক্ষার্থী শিক্ষকের গালে দুটি চড় মেরে ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়।
ঘটনার বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষার হলে নিয়ম মেনেই দায়িত্ব পালন করছিলাম। অভিযুক্ত ওই ছাত্রের আগে আরও এক ছাত্র অসদুপায় অবলম্বন করায় খাতা নিয়ে নিই। কিন্তু এই ছাত্র এভাবে আমাকে মারধর করবে, তা বুঝে উঠতে পারিনি।’
আজ শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন করে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা ও পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বিদ্যালয়টিতে যান। তাঁরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন। তাঁরা শিক্ষককের পাঠদানের অনুরোধ করলে তাঁরা ক্লাসে ফিরে যান।
এদিকে শিক্ষককে মারপিটের প্রতিবাদ ও অভিযুক্ত ছাত্রকে গ্রেপ্তারের দাবিতে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয় থেকে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরে যান। সেখানে মানববন্ধন করেন তাঁরা।
অভিযুক্ত ছাত্রের বাবা সরদার আল আমিন বলেন, তাঁর সন্তান শিক্ষককে মারপিট করে অপরাধ করেছে। শুধু খাতা কেড়ে নেওয়ার জন্য এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়। এর পেছনে বা আগে-পরে অন্য কোনো বিষয় আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখতে বলেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষককে ছাত্রের মারধর করার ঘটনায় আমি হতবিহ্বল, চরম বিব্রত। এ ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে চার সদস্যের তদন্ত দল গঠিত হয়েছে। আমার বিশ্বাস, পক্ষপাতহীনভাবে তারা তদন্ত করবে; যাতে প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে।’