হবিগঞ্জে শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশের মৃত্যুরহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবিতে মানববন্ধন

হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বিদ্যালয় শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশের মৃত্যুরহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবিতে মানববন্ধন করেন স্থানীয় লোকজন। আজ রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনেছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বিদ্যালয় শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশের (৪০) মৃত্যুরহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন স্থানীয় লোকজন। আজ রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের হবিগঞ্জ জেলা শাখা। বিকেলে হবিগঞ্জের নারী শিক্ষকেরাও একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অসিত রঞ্জন দাস, সাংবাদিক ও আইনজীবী মনসুর উদ্দিন আহমেদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি সিদ্ধার্থ বিশ্বাস, বর্ণমালা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক দিপুল কুমার রায়, কবি অপু চৌধুরী, যাত্রী সেবা সংগঠনের সভাপতি জালাল উদ্দিন প্রমুখ। মানববন্ধনে নানা শ্রেণি–পেশার লোকজন অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে। এর পেছনে যাঁরা জড়িত, তাঁরা এই নারীকে দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাকমেল করে আসছিলেন। তাঁদের মানসিক অশান্তি ও নিপীড়নের কারণে এই শিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এ এলাকায় একটি চিহ্নিত অপরাধী চক্রের। তাঁরা এলাকায় সুদের ব্যবসার আড়ালে নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই শিক্ষিকার মৃত্যুর পেছনে রহস্য লুকিয়ে আছে। আমরা প্রশাসনের কাছে মৃত্যুর সঠিক রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি জানাই। পাশাপাশি যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।’

১২ মে পুলিশ উপজেলার লুকড়া-মাদনা সড়কের একটি খালপাড় থেকে রিবন রূপা দাশের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় লাশের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। লাশের পাশে ছিল বিষের বোতল।

রিবন রূপা দাশ লাখাই উপজেলার ভরপুর্ণীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি একই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের অজয় দাশের স্ত্রী। রিবন ও অজয় তাঁদের দুই ছেলেকে (৭ থেকে ১০ বছর বয়সী) নিয়ে হবিগঞ্জ শহরের পুরান মুন্সেফ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। ৯ মে সকালে রিবন রূপা দাশ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর স্বামীকে জানান তিনি স্কুল শেষ করে মৌলভীবাজারে তাঁর বাবার বাড়ি যাবেন। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এরপর ১২ মে লুকড়া-মাদনা সড়কের ঝিনঝিনিয়া সেতুর কাছে খালপাড় থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

রিবন রূপা দাশের মরদেহ উদ্ধারের তিন দিন পর গত বুধবার তাঁর স্বামী অজয় দাশ এ ঘটনার জন্য তিন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে লাখাই থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার একটি মামলা করেন। আসামিরা হলেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামের পিন্টু আচার্য্য, হবিগঞ্জ শহরের চিড়াকান্দি এলাকার বিপ্লব রায় ও বাহুবল উপজেলার পূর্ব জয়পুর গ্রামের অভিজিৎ ভট্টাচার্য। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও দুজনকে।

মামলার অভিযোগে অজয় দাশ লেখেন, হবিগঞ্জ শহরের ওষুধ ব্যবসায়ী পিন্টু আচার্য্য তাঁর স্ত্রী রিবন রূপা দাশের কাছে ৫ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে নানা সময় তাঁকে ব্ল্যাকমেল করে আসছিলেন। রিবনের সংসারে অশান্তি তৈরির হুমকি দিতেন তিনি। এ জন্য পরিবারকে না জানিয়ে তিন বছর ধরে পিন্টুকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়ে আসছিলেন রিবন। পিন্টু আচার্য্যের সহযোগী বিপ্লব কুমার রায় ও অভিজিৎ ভট্টাচার্যও নানা সময় রিবনের কাছ থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নেন। টাকা নেওয়ার পরও তাঁরা সবাই শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশকে নানা সময় ভয় দেখিয়ে আসছিলেন। এ অশান্তির কারণে তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যা করেন বলে বাদী মামলায় উল্লেখ করেন। মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, রিবন রূপা দাশ তাঁর মৃত্যুর এক দিন আগে পারিবারিক এক বন্ধুর কাছে মুঠোফোনে একটি খুদে বার্তা পাঠান। সেখানে তিনি অভিযুক্ত তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং টাকা পাওনার বিবরণ দিয়ে লেখেন, তিনি আত্মহত্যা করলে ওই তিন ব্যক্তি তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী হবেন।

মামলার বাদী ও রিবন রূপা দাশের স্বামী অজয় দাশ বলেন, অভিযুক্ত পিন্টু আচার্য্য শহরে ওষুধ ব্যবসার আড়ালে সুদের ব্যবসা করে আসছেন। তিনি ও তাঁর অন্য সঙ্গীরা অসংখ্য নারীকে ফাঁদে ফেলে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।

লাখাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, পুলিশ মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করছে। পাশাপাশি নিহত এই শিক্ষিকা মৃত্যুর আগে যাঁদের নাম উল্লেখ করে মুঠোফোনে বার্তা দিয়ে গেছেন, সেটিও পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।