সম্প্রতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় মেয়ের বাড়ি থেকে ব্যাটারিচালিত ভ্যানে নিজের বাড়ি ফুলবাড়ীতে ফিরছিলেন গৃহবধূ শারমিন আক্তার (৪২)। পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর বাঁ পায়ের গোড়ালির নিচে হাড় ভেঙে যায়। দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও পুরোপুরি সুস্থ হননি। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জেনেছেন আজ শুক্রবার সকালে চিরিরবন্দর শহরে আমেনা বাকি রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ মাঠে ঢাকা থেকে চিকিৎসক আসবেন। বিনা মূল্যে রোগী দেখবেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন শারমিন। চিকিৎসকের পরামর্শ পেয়ে তিনি বলেন, ‘মনে করেছিলাম আমজাদ ডাক্তার রোগী দেখবেন। কিন্তু আসিয়া দেখনু, ম্যালা ডাক্তার আসিছে। ভালো করি দেখিশুনে ওষুধ লিখে দিল। কিছু ওষুধও ফ্রি দিয়া দিল।’
শারমিন আক্তারের মতো পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু আজ সকালে ফারাজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিনা মূল্যে চিকিৎসা নিয়েছেন। এবি ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এ মেডিকেল ক্যাম্পে ঢাকা-রংপুর-দিনাজপুর মেডিকেলের ২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীদের সমস্যা শুনে ব্যবস্থাপত্র দেন। পরে ফারাজ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রোগীদের কয়েক ধরনের ওষুধও বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়।
সকাল থেকে দিনাজপুরসহ পাশের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী থেকে রোগীরা কলেজ মাঠে আসতে শুরু করেন। মাঠে রোগীদের বসার জন্য শামিয়ানার ব্যবস্থা করা হয়। রোগীদের কারও শ্বাসকষ্ট, কারও হাঁটু ও কোমরব্যথা। নাক-কান-গলার সমস্যা, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা নিয়েও এসেছেন কেউ কেউ। মাঠের উত্তর প্রান্তে নিবন্ধন বুথে নিবন্ধনের পর সিরিয়াল অনুযায়ী রোগীদের চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যান স্বেচ্ছাসেবী কলেজ শিক্ষার্থীরা। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সমস্যার কথা জানিয়ে ব্যবস্থাপত্র নেন। সেই সঙ্গে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড থেকে বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধও সরবরাহ করা হয়।
মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের প্রধান এম আমজাদ হোসেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শারমিন সুলতানা লাকি, হরিপদ সরকার, মাহফুজা আক্তার, শর্মিষ্ঠা ঘোষাল, শীতল চন্দ্র পাহান, মাজহারুল ইসলাম, রেজাউল হক প্রমুখ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম ব্যবস্থাপক ওয়াহেদুজ্জামান, সহকারী বিক্রয় ব্যবস্থাপক নির্মল কুমার রয়, মাঠ ব্যবস্থাপক শরিফুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পঞ্চগড় থেকে মাকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মায়ের হাঁটুর ব্যথা। ডাক্তার বলেছে, “হাড় ক্ষয় হয়েছে।” আমি চিরিরবন্দরেই থাকি। অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ আমজাদ স্যারসহ ঢাকা থেকে ডাক্তার আসার কথা শুনে সকালে ট্রেনে করে দিনাজপুর আসছি। এক্স-রে করে নিয়ে এসেছিলাম। ডাক্তার দেখলেন। ওষুধ লিখে দিয়েছেন। কিছু ওষুধও ফ্রি দিয়েছেন। মা খুব খুশি হয়েছেন।’
রোগী দেখার ফাঁকে চিকিৎসক আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন সময় গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে এ ধরনের মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করেন। ভালো চিকিৎসকদের পরামর্শ ও স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে মানুষ খুশি হয়। রোগীদের ফলোআপ যাতে ঠিকঠিকভাবে হয়, সে জন্য দিনাজপুর ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসককে রেখেছেন। ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন গ্রামে গ্রামে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ফাউন্ডেশনের এ কার্যক্রমের সঙ্গে এবি ফাউন্ডেশন সব সময় ছিল, আছে এবং থাকবে।
এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম ব্যবস্থাপক ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন সারা দেশে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এনে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় আজ শুক্রবার আয়োজিত ক্যাম্পে মোট ২০ জন চিকিৎসক ৫৩৫ জন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষকে পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি রোগীদের ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।