ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবীরা আদালতে ফেরেননি, বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে আজও আইনজীবীরা না ফেরায় আইনজীবী সমিতি ভবনের নিচতলায় বসে আছেন বিচারপ্রার্থীরা। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকেছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা আদালতে ফেরেননি। আজ সোমবারও তাঁরা আদালত বর্জন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভা শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে আইনজীবীরা একটি বাদে জেলার সব আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা।

তানভীর ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ আদালতে আমাদের কর্মবিরতি চলবে। আইনজীবী সমিতির ভবনে সাধারণ সভা হবে। আগামীকাল থেকে জেলা জজ শারমিন নিগারসহ সব আদালতে ফিরে যাবেন আইনজীবীরা। তবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে আইনজীবীরা যাবেন না। তাঁর বিষয়ে আইনজীবীরা অনড় অবস্থায় আছেন। বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে জানানো হয়ে। ওই বিচারকের বিষয়ে দুই থেকে এক দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেবেন বলে গতকাল আইনমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন।’

আরও পড়ুন

গতকাল রোববার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জেলার বিভিন্ন আদালতের বিচারক ও পুলিশ-প্রশাসনসহ আইনজীবী সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সভা শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্জনের বিষয়টি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। আইনজীবীরা আদালত বর্জন প্রত্যাহার করবেন। আইনজীবীরা কাল আদালতে যাবেন।’

এ দিকে আজ সকাল নয়টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে ঘুরে জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় আইনজীবীদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। একজন-দুজন করে আইনজীবী আসছিলেন। আইনজীবী সহকারী সমিতি ভবনেও সহকারীদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। আদালত ভবনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দপ্তর খুলতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিচারপ্রার্থীরা আদালতে হাজির হতে শুরু করেন। তবে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে চলমান অচলাবস্থার জন্য পূর্বের মতো আজও বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

জেলা জজ আদালতের নিচ তলায় আজ সকাল ১০টার দিকে কথা হয় ফেনী সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নারায়ণ চন্দ্র দাসের সঙ্গে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার আগে কর্মরত ছিলেন। মাদকের একটি মামলায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ এর আদালতে তাঁর সাক্ষ্য দেওয়ার তারিখ ছিল আজ। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম আদালতের অচলাবস্থার নিরসন হয়ে গেছে। সাত সকালেই মামলায় সাক্ষী দিতে ফেনী থেকে বাসে করে প্রথমে কুমিল্লা পৌঁছাই। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছি। কিন্তু আজ সাক্ষী দিতে পারব না। তাই ফেনী ফিরে যাচ্ছি। পরবর্তী তারিখে ছুটি নিয়ে আবার আসতে হবে।’

বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর গ্রাম থেকে ছেলের স্ত্রীর করা যৌতুকের একটি মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে আসেন ইসমাইল মিয়া। তিনি বলেন, ‘সকালে আদালতে আইছি। কোনো লাভ হইলো না। দিনডাই মাইর। ফিরা যাইতাছি গা।’

আরও পড়ুন

নাজির মুমিনুলকে বদলি

গত ৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত আন্তজেলা বদলিসংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে ‘প্রশাসনিক কারণ’ দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মো. মুমিনুল ইসলাম চৌধুরীকে চাঁদপুর জেলা জজ আদালতে বদলি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে মুমিনুল ইসলামের বদলিকে অভিহিত করা হয় ‘মিউচ্যুয়াল ট্রান্সফার’ হিসেবে। এর অংশ হিসেবে চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মো. ছানাউল্যা তালুকদার তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা দায়রা জজ শারমিন নিগার, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে বদলি এবং নাজির মো. মুমিনুল ইসলাম চৌধুরীর শাস্তির দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা দুই আদালত বর্জন করে আসছিলেন। এরপর গত বুধবার থেকে সব আদালত বর্জন শুরু করেন আইনজীবীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো বিচারপ্রার্থী।