বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে বরণ করে নিতে বড় আকারের ‘শোডাউন’ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। দলটির প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম ৮ মে ঢাকা থেকে সড়কপথে বরিশালে আসবেন। ওই দিন তাঁকে বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা সহকারে বরণ করবেন দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। পরে তাঁকে দেওয়া হবে সংবর্ধনা। এ জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে। মূলত শুরুতেই চমক দেখাতে এ কৌশল নিয়েছে দলটি।
বিএনপি এবার নির্বাচন বর্জন করায় এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব-অবিশ্বাসের কারণে এবারের সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। এ ছাড়া প্রার্থী হওয়ার আলোচনায় নাম না থাকলেও আকস্মিক দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতা ও জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমকে প্রার্থী করার ঘটনায় নগরের বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন চলছে।
গত ১৮ এপ্রিল দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণার কথা থাকলেও ওই দিন দুপুরে তা আকস্মিক স্থগিত ঘোষণা করে ইসলামী আন্দোলন। ঈদের পাঁচ দিন পর ২৭ এপ্রিল মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেন দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। মনোনয়ন ঘোষণার পর এক সপ্তাহ পার হলেও দলটির প্রার্থী বা অন্য ব্যক্তিরা নগরে নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো সভা বা কার্যক্রম পরিচালনা করেননি।
দলটির নেতারা জানান, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ঘিরে এবার যে চমক সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে দল সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে বড় ধরনের প্রস্তুতি নিতে তাঁরা গণসংযোগ বা নির্বাচনী কার্যক্রমে মাঠে নামতে সময় নিচ্ছেন। সবকিছু গুছিয়ে একসঙ্গে মাঠে নামতে চায় দলটি। এ ছাড়া দলের শক্তি-সামর্থ্যের জানান দিতে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে এগোচ্ছেন তাঁরা। দলের প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিম এখনো ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি ৮ মে সড়কপথে বরিশালে আসবেন। ওই দিন বিকেলে তাঁকে নগরের প্রবেশদ্বার গড়িয়ারপাড় এলাকায় বরণ করবেন নেতা-কর্মীরা। এ জন্য অন্তত দুই হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁকে শোভাযাত্রা সহকারে নগরে বরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন স্থানে ১০টি তোরণ করার প্রস্তুতি আছে। এরপর সেখান থেকে নথুল্লাবাদ ও চৌমাথা হয়ে আমতলা দিয়ে শোভাযাত্রাটি বরিশাল শহরে প্রবেশ করবে। পরে জিলা স্কুল মোড়ে অস্থায়ী মঞ্চে দেওয়া হবে সংবর্ধনা।
ইসলামী আন্দোলনের গণমাধ্যম শাখার দায়িত্বে থাকা ইসলামী যুব আন্দোলনের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি এইচ এম সানাউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে প্রার্থীর সংবর্ধনা আয়োজনের। কিন্তু সেখানে এসএসসি পরীক্ষার কারণে সে পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়েছে। জিলা স্কুল মোড়ে অস্থায়ী মঞ্চে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করা হবে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে।’
দলীয় সূত্র জানায়, ৮ মে বিকেলের এ সংবর্ধনা ও বরণ অনুষ্ঠানে দলের ৩০ ওয়ার্ডের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ছাড়াও বরিশাল সদর উপজেলার আশপাশের এলাকার কর্মী-সমর্থকেরা যোগ দেবেন। বড় জমায়েত নিশ্চিত করার জন্য ভেতরে-ভেতরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দলের সাংগঠনিক শক্তি এবং ভোটের মাঠে তাঁদের প্রভাব বিস্তারের জন্য আলাদা করে এ ‘শোডাউন’–এর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের দলীয় সূত্র আরও জানায়, বরিশাল সিটিতে বিএনপির আলাদা ভোটব্যাংক রয়েছে। কিন্তু এবার দলটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় দলে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মনোনয়ন পেয়েছেন সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। ফলে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের এখনো খায়ের আবদুল্লাহর পাশে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের নেতারা সাদিক আবদুল্লাহর অনুগত হওয়ায় তাঁরা দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে যোগযোগ করছেন না। বিএনপির ভোটের মাঠে না থাকা এবং আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল থাকায় ইসলামী আন্দোলন এবার ভোটের মাঠে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে এমন তৎপরতা চালাচ্ছে।
জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নানা কারণে এবার ইসলামী আন্দোলন ভোটের মাঠে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। এমনকি আমরা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে ৮ মে দলীয় মেয়র প্রার্থীকে বরণের প্রস্তুতি চলছে। আশা করি, এবার প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলন যেভাবে চমক দিয়েছে, ভোটের মাঠেও তেমন চমক দেখাতে পারবে।’