ময়নাতদন্তের জন্য নিহত দুজনের লাশ কবর থেকে তুলতে দেয়নি পরিবার

কুষ্টিয়া জেলার মানচিত্র

কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নিহত সুরুজ আলী ওরফে বাবুর (৩২) লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তুলতে দেয়নি তাঁর পরিবার। একই দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আশরাফুল ইসলামের (৩৬) লাশও ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করতে না পেরে ফিরে গেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

কুষ্টিয়া শহরের মডেল থানার সামনে গত ৫ আগস্ট বিকেলে সুরুজ ও আশরাফুল নিহতের ঘটনায় পৃথক মামলার পর লাশ ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশে আজ বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কবর থেকে তাঁদের লাশ উত্তোলন করতে যান। লাশ উত্তোলনে গেলে দুই পরিবারই আপত্তি জানায়। এতে কবর থেকে লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে সুরুজ আলী নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট রাইসুল হক নামে এক আন্দোলনকারী বাদী হয়ে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। নিহত সুরুজ সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর গ্রামের শালদহ এলাকার মৃত নওশের আলীর ছেলে। তিনি পেশায় স্বর্ণকার ছিলেন।

আশরাফুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে গত ২০ আগস্ট তাঁর স্ত্রী লাবণী আক্তার কুষ্টিয়া মডেল থানায় আলাদা একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

আশরাফুল সদর উপজেলার শালদহ গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। তিনি রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। উভয় মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা–কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ইকবাল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, লাশ দুটো ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উঠাতে গিয়ে উভয় পরিবারসহ গ্রামবাসীদের আপত্তির মুখে পড়া হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বুঝিয়ে কোনো সুফল আসে না। তাঁরা কেউ লাশ উঠাতে রাজি হননি। একপর্যায়ে সেখান থেকে চলে আসা হয়। লাশের ময়নাতদন্ত করা না গেলে হত্যা মামলার ভবিষ্যৎ কী হবে, বলা যাচ্ছে না।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আন্দোলনকারী সুরুজকে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং আশরাফুলকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে হত্যা করা হয়।

সুরুজ হত্যা মামলার বাদী রাইসুল হক বলেন, ‘ঘটনার এত দিন পরে এসে আন্দোলনে শহীদের লাশ কবর থেকে তোলা মানে অমর্যাদা করা। তাই পরিবার চায় না, সুরুজের লাশ উত্তোলন হোক। এ ছাড়া তদন্তের স্বার্থে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে রাজি আছি।’

লাবণী আক্তার বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করতে রাজি হইনি। তাতে যদি আসামিরা ছাড়া পেয়ে যায়, তবে যাক। আল্লাহ এর বিচার করবেন।’

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, লাশ উত্তোলনের ব্যাপারে কিছু বিষয় লক্ষ্য করে ম্যাচ সেন্টিমেন্টকে আমলে নিই। ওই মুহূর্তে কোনো ত্বরিত সিদ্ধান্ত না নিয়ে জেলার ভারপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করি। পরে চলে আসি। তাদের (নিহত ব্যক্তির পরিবার) মূল চাওয়াকে আমলে নিই।’