চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকের বিতণ্ডা, ভিডিও ভাইরাল
বিভাগের অভ্যন্তরীণ সভায় উপস্থিতি নিয়ে ‘রসিকতা’ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের মধ্যে বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার ভিডিও আজ শুক্রবার দুপুর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই শিক্ষকদের এ ধরনের আচরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা করছেন।
বিতণ্ডায় জড়ানো ওই দুই শিক্ষক হলেন সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইদুল ইসলাম সরকার। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি গত ২৬ নভেম্বর বেলা সোয়া ১১টার দিকে ধারণ করা হয়েছে। অধ্যাপক মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন এটি করেছেন। অপর প্রান্তে ছিলেন সাইদুল ইসলাম সরকার। এ সময় তাঁকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে দেখা গেছে। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক অহিদুল আলম তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিনের উদ্দেশে সাইদুল ইসলাম বলছেন—‘তুই আমাকে বেয়াদব বলার কে? তুই আমার সাথে প্রফেসরগিরি দেখাইলি কেন?’ জবাবে মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘বেয়াদবি করার কারণে বেয়াদব বলছি।’ প্রায় চার মিনিট দুজনের মধ্যে তর্ক হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, অধ্যাপক মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন আর সহকারী অধ্যাপক সাইদুল ইসলাম সরকার দুজনেই মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী। সাইদুল ইসলাম ওই ইনস্টিটিউটের ২৯তম আর মোসলেম উদ্দিন ৩০তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। পরে তাঁরা শিক্ষক হন। সাইদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায়বিষয়ক কমিটির সদস্য। আর মোসলেম উদ্দিন ক্যাম্পাসে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সদস্য।
বিভাগের একাধিক শিক্ষক জানান, গত ২৬ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের সঙ্গে বিভাগের শিক্ষকদের বৈঠকের তারিখ নির্ধারিত ছিল। এই বৈঠকে বিভাগের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। তবে বৈঠকের আগের দিন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক অহিদুল আলম হোয়াটসঅ্যাপে অন্য শিক্ষকদের এক খুদেবার্তা দেন। সেখানে তিনি সহ-উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার আগে নিজেরা বৈঠক করবেন বলে জানান। তাই সবাইকে মূল বৈঠক শুরুর আগেই বিভাগে আসার অনুরোধ করেন।
সোয়া ১১টার দিকে অধ্যাপক সাইদুল ইসলাম সরকার বিভাগের সভাপতির কক্ষে পৌঁছান। সেখানে অন্য শিক্ষকেরা আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন। সাইদুল ইসলাম উপস্থিত হওয়ার পর মোসলেম উদ্দিন সভাপতিকে উদ্দেশ করে ‘রসিকতা’ করে বলেন, ‘বৈঠকে দেরিতে আসার বিষয়টি নোট করেন। এটা সহ-উপাচার্যকে আমি জানাব।’ এ কথা বলার পরেই দুজনে তর্কে জড়ান। তবে দুপুর ১২টার দিকে সহ-উপাচার্যের বৈঠক যথাযথভাবেই হয়েছে বলে দাবি করেন বিভাগের শিক্ষকেরা।
জানতে চাইলে অধ্যাপক মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভাগে তিনি ছাড়া সবাই ফ্যাসিবাদের লোক। ২৬ নভেম্বরের ঘটনাটি তিনি সাদা দলের অন্য শিক্ষকদের জানিয়েছেন। পরে জানতে পারেন এর আগেও বিভিন্ন সময় সাইদুল ইসলাম সরকার শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন। আন্দোলনে বিরোধিতা করায় ছাত্ররা তাঁকে বিভাগ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। এসব দিক বিবেচনায় তিনি অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিমধ্যে অভিযোগও দিয়েছেন।’
জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘একই বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ায় আগে থেকে মোসলেম উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর তুইতোকারি সম্পর্ক। তিনি কখনো কারও ক্ষতি করেননি। শুধু আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাঁকে হেনস্তা করা হচ্ছে। তাঁর পদোন্নতি আটকে দেওয়া হয়েছে। তিনি এসবের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন।’
দুটি ঘটনারই আলাদা তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুজনেরই লিখিত অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুটি পৃথক কমিটি করা হবে। কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।