নেত্রকোনায় বন্যার পানি কমলেও উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

নেত্রকোনার বন্যা আক্রান্ত বাড়ি–ঘর থেকে এখনো পানি নামেনি। তাই তুলনামূলক উঁচু জায়গায় গবাদিপশু রাখা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে দুর্গাপুরের কাকৈইগড়া ইউনিয়নের শান্তিপুর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

দুই দিন ধরেই নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে কলমাকান্দা উপজেলার উব্দাখালী নদীর পানি আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে পানি কমলেও বাসিন্দাদের সংকট ও দুর্ভোগ এখনো কাটেনি। দুর্গত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি সংস্কার করতে পারছেন না। এসব এলাকার অনেক গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানির নিচে থাকায় প্রয়োজনীয় যোগাযোগেও তাঁদের বেগ পেতে হচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুরও খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে সম্প্রতি নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও সদর উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এতে ২৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। গত মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে শুরু হলেও এখনো বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আমন, শাকসবজির খেত ও ঘরবাড়িত প্লাবিত হয়ে আছে। পানির কারণে ২১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় ২৮৫ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা–পাকা সড়ক পানির নিচে থাকায় যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। পানির নিচে ডুবে আছে প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর আমনখেত। উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও জেলার কংস, ধনু, সোমেশ্বরী, মগড়াসহ অন্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে আছে।

আরও পড়ুন

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথম আলোকে জানান, জেলার সব নদ-নদীর পানিই দ্রুত কমছে। তবে এখনো উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। যেভাবে পানি কমছে, আশা করা হচ্ছে, আজ সন্ধ্যার মধ্যে নদীর ওই পয়েন্টের পানিও বিপৎসীমার নিচে চলে যাবে। সব মিলিয়ে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে।

বন্যায় জেলার সড়কপথে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এজিইডি) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম। তিনি জানান, জেলায় এলজিইডির আওতাধীন ৫ হাজার ৯৫৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১ হাজার ৬৩৮ কিলোমিটার পিচঢালা সড়ক। বাকিগুলো সিসি, আরসিসি, মেগাডম, কার্পেটিং ও কাঁচা সড়ক। বন্যার পানিতে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার সড়কপথ তলিয়ে যায়। আর এখনো ২৫০ কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে আছে। যেসব সড়ক থেকে পানি নেমেছে, সেগুলোর বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় অধিকাংশ সড়ক ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

এদিকে পানি বন্যা দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন পূর্বধলার জারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, কংস নদের তীরে থাকা জারিয়া-নাটেরকোনা এলাকার দুই স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে সম্পদ ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। অনেক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। পানি কমলেও, তাঁদের দুর্ভোগ কমছে না। টাকার অভাবে নিম্ন আয়ের মানুষ ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি থাকার উপযোগী করতে পারছেন না। এ ছাড়া গরু-ছাগল নিয়েও বিপদে পড়েছেন।

আরও পড়ুন

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘সব মিলিয়ে বন্যার পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। মানুষের কিছু দুর্ভোগ তো হচ্ছেই। আমরা ত্রাণসহায়তা অব্যাহত রেখেছি। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসহ অন্য বিষয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুত সমাধান করা হবে।’