ব্যবসায়ী নেতার সাক্ষাৎকার

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট সিলেটের চিরায়ত সম্প্রীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে সিলেটে গত সোমবার বের করা বিক্ষোভ মিছিল থেকে নগরের ১৩টি দোকান-রেস্তোরাঁ, সুপারশপ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে লুটপাটও চালানো হয়। এতে বিক্ষুব্ধ হন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. আবদুর রহমানের (রিপন) সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলার সদস্যসচিব।

প্রথম আলো:

সিলেটে এই যে হামলা-ভাঙচুর আর লুটপাটের ঘটনা ঘটল, কীভাবে দেখছেন?

আবদুর রহমান: এটা কোনো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

প্রথম আলো:

আপনারা ব্যবসায়ীরা তো সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে করণীয় কী?

আবদুর রহমান: আমরা ব্যবসায়ীরা মনে করি, আগামী দিনে যেকোনো কর্মসূচি থেকে প্রথমত স্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো যাবে না। এ ছাড়া জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব রাজনৈতিক দল ও তৌহিদি জনতার সহযোগিতা কামনা করছি।

প্রথম আলো:

এমনিতে তো সিলেট সম্প্রীতির অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলে সহিংস প্রতিবাদী আচরণের দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই। হঠাৎ কেন এমন ঘটল? কী কারণ মনে করছেন?

আবদুর রহমান: সিলেট দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে একটু আলাদা। এখানে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ সব ধরনের সম্প্রীতি আছে। সবার মধ্যেই পরমতসহিষ্ণুতা আছে। কিন্তু এই যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটল, এটা সিলেটের চিরায়ত সম্প্রীতির মধ্যে পড়ে না। এটা চিরায়ত সম্প্রীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড। গত সোমবার সিলেটে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করেছেন সবাই। কেবল কিছু দুষ্কৃতকারী দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে হামলা-লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে।

প্রথম আলো:

কারা এসব হামলায় জড়িত বলে মনে করেন?

আবদুর রহমান: যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে হামলাকারী ও লুটপাটকারীদের চেহারা স্পষ্ট দেখা যায়। এ ছাড়া হামলা-লুটপাট চালানোর ভিডিও ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই অপরাধীদের অনেককেই শনাক্ত করা সম্ভব। কেউ কেউ শনাক্তও হয়েছেন। হামলাকারীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের একটাই পরিচয়, ওরা লুটপাটকারী ও সন্ত্রাসী।

প্রথম আলো:

হামলার আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা আপনাদের কাছে যথাযথ মনে হচ্ছে কী?

আবদুর রহমান: পুলিশ ইতিমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। সে জন্য তাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। যেহেতু ঘটনার অসংখ্য ফুটেজ আছে, তাই প্রত্যেককে শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। আমরা জানি, গত ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। তাই সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, এমন পরিস্থিতিতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। অন্যায়কারীরা যেন অন্যায় না করতে পারে, সে জন্য সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
আবদুর রহমান: প্রথম আলোর পাঠকদেরও ধন্যবাদ।