পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার দেড় মাস পরও জানা যায়নি পদে কারা

বিএনপি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল। ওই সম্মেলনের মাধ্যমে তিনজনের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে আনিছুল ইসলাম ঠাকুরকে সভাপতি, নুরুজ্জামান লস্করকে সাধারণ সম্পাদক ও ডি এম দুলালকে করা হয়েছিল সাংগঠনিক সম্পাদক।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন মাসের মধ্যে তিনজনের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। আড়াই বছর পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর সরাইল উপজেলার ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান ও সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম। তাঁরা একটি পত্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটির নামে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রকাশ করে। বাকি ৯৯ জনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। দেড় মাস পরও নেতা-কর্মীরা জানেন না কে কোন পদে আছেন।

এ কমিটি মেনে নিতে রাজি নন দলের দীর্ঘদিনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সরাইল উপজেলা বিএনপির সর্বশেষ ১২১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আনোয়ার হোসেন। ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর ওই কমিটি বিলুপ্ত করে জেলা কমিটি। এরপর ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আনিছুল ইসলাম ঠাকুরকে আহ্বায়ক ও নুরুজ্জামান লস্করকে সদস্যসচিব করে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা কমিটি। ওই কমিটি নিয়ে সাবেক কমিটির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আহ্বায়ক কমিটির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। মামলাও হয়েছে।

আহ্বায়ক কমিটির পর ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল নুরুজ্জামান লস্করের কালীকচ্ছ ইউনিয়নের সূর্যকান্দীর বাড়িতে দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত থাকলেও তৎকালীন স্থানীয় বিএনপির সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া (পরে দলছুট হয়ে বিতর্কিত), সাবেক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন না। উপজেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক কমিটির নেতা–কর্মীরা এ কমিটি মেনে নেননি। এখন সরাইল উপজেলায় দলের কয়েকটি ধারা।

উপজেলা বিএনপির সাবেক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল আলম খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা পাইনি। আমি কোনো পদে আছি কি না, জানি না। এ নিয়ে কিছু বলতেও চাই না।’

উপজেলা বিএনপির টানা ১৮ বছরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে, কিন্তু তারা তা প্রকাশ করছে না। তারা করবে না। লোক পাবে কোথায়? তিনজনের কমিটি দিয়ে আড়াই বছর পার করেছে। এখন দুজন দিয়েও পার করবে তিন বছর। এখন যাঁরা বিএনপির কমিটিতে আছেন, তাঁরা কেউ বিএনপির না। আনিছ ঠাকুর পদত্যাগ করেছিলেন। আর নুরুজ্জামান লস্কর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তাঁদের কেউ মানে না।’

উপজেলা বিএনপির টানা ৩০ বছরের সাবেক সভাপতি আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাংগঠনিক নিয়মে কমিটি হয়নি।

নুরুজ্জামান লস্কর বলেন, ‘সাংগঠনিক প্রক্রিয়া বজায় রেখে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে। দলের দুর্দিনে আমি মাঠে ছিলাম। দলের নেতা–কর্মীরা আমাদের পাশে আছে। আমিও সবার পাশে আছি।’