আন্দোলনের পর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভা হয়নি

রাজশাহী নগর ভবনপ্রথম আলোর ফাইল ছবি

আন্দোলনের মুখে বন্ধ হলো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সপ্তম পরিষদের চতুর্থ সাধারণ সভা (জিএম)। গতকাল সোমবার ওই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্রশাসক ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর গত ২৭ আগস্ট জিএম সভা আহ্বান করেন।

এদিকে জিএম বন্ধের দাবিতে গত রোববার সকালে দুই দফা ও গতকাল সকালে নগর ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ হয়। বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়। রোববার সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনিবার্য কারণ দেখিয়ে ওই সভা স্থগিত করেন।

নগর ভবন সূত্রে জানা যায়, সভায় ১২টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। আলোচ্যসূচির মধ্যে ছিল, সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সেবার বর্তমান পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ: (ক) এসটিএস ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, (খ) স্বাস্থ্যসেবা, (গ) জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, (ঘ) নাগরিক সনদ, (ঙ) ওয়ারিশান সনদ ইত্যাদি; সাম্প্রতিক সহিংসতায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ সম্পর্কে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ; নগর ভবন ও ওয়ার্ড কার্যালয়সমূহ মেরামত/সংস্কারপ্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার নিরূপণ; উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ সম্পর্কে হালনাগাদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা, বাস্তবায়নে কোনো চ্যালেঞ্জ থাকলে তা উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ; স্যাটেলাইট টাউন/নতুন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ; রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অপ্রয়োজনীয় জনবল যৌক্তিকীকরণ প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ; কোনো ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনুপস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ; করপোরেশনের ব্যাংক হিসাবসমূহের আর্থিক অবস্থা এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা; কর্মকর্তা–কর্মচারীদের পেনশন বা এ–জাতীয় অন্যান্য অনিষ্পন্ন আর্থিক দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা; পঞ্চবার্ষিক অ্যাসেসমেন্ট-২০২৪ সংক্রান্ত ও রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ; রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘সিটি সেন্টার’ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত দোকান/স্পেস বরাদ্দ মূল্য, বরাদ্দ মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ আয়কর এবং ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বাবদ অর্থ জমা প্রদান প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিবিধ।

বিএনপি নেতাদের দাবি, জিএম সভায় ‘ঘাপলা বিল’ পাস করা হতো। এ জন্য ছাত্র-জনতা বাধা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন (বুলবুল) বলেন, পতিত সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে কোনো জিএম তাঁরা মানেন না। প্রশাসক তাঁর ‘বডি’ নিয়ে জিএম করতে পারেন; কিন্তু কোনো কাউন্সিলর এই জিএমে যেতে পারবেন না। এই কাউন্সিলরদের নিয়ে জিএম করা মানে শহীদ ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা।

মোসাদ্দেক হোসেন আরও বলেন, সভায় আলোচ্যসূচির মধ্যে চার নম্বর ও আট নম্বরে ঘাপলা বিলের ব্যাপার রয়েছে। পতিত মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সময়ে যেসব ঘাপলা হয়েছে, এই জিএমে সেসব বিল পাস করার খবর পেয়েছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরীফ উদ্দিন বলেন, বিলের সঙ্গে সভার কোনো সম্পর্ক নেই। জিএমে যোগদানকারী বেশির ভাগ কাউন্সিলরই অভিযুক্ত। এখন তাঁরা সভায় এলে যদি কোনো অসম্মানজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেটা এড়ানোর জন্য প্রশাসক সভা স্থগিত ঘোষণা করেছেন। পরে যদি তাঁদের আসার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়, দ্রুতই সভা ডাকা হবে।