কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের মংডু এলাকা থেকে ১২ দিন ধরে দিনভর থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ এলেও দুই দিন ধরে তা বন্ধ আছে। এখন কেবল রাতের বেলায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন এপারের বাসিন্দারা।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে আছে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। উভয় পক্ষের গোলাগুলি ও ভারী গোলার বিস্ফোরণে মংডু, বুচিডং-রাচিডং টাউনশিপ লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। তাতে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিথুয়ের সঙ্গে এই তিন শহরের সরাসরি সড়ক ও নৌপথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে শহরগুলোয় খাদ্যসামগ্রীসহ জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ কারণে দিনের বেলায় সংঘর্ষ সীমিত রেখে রাতের বেলায় লড়ছে উভয় পক্ষ।
রাখাইনের চলমান সংঘাতের জেরে টেকনাফের ১২টি গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ নাফ নদীতে মাছ শিকার, নদীতীরের জমিতে ধান-শাকসবজির চাষাবাদ, চিংড়ি ও কাঁকড়া উৎপাদন করতে পারছেন না। পবিত্র রমজান মাসে এসব স্বল্প আয়ের মানুষদের আর্থিক টানাপোড়েনের সংসারে দুর্ভোগ ও শঙ্কা বাড়াচ্ছে ওপারের বিস্ফোরণ ও গোলাগুলি।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রোজার মাসেও রাতে বিস্ফোরণের শব্দ এপারের লোকজনের দুর্ভোগ ও শঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। শক্তিশালী গ্রেনেড বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কাঁপছে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কুলালপাড়া, ডেইলপাড়াসহ অন্তত ১২টি গ্রাম। শিগগিরই যে বিস্ফোরণ বন্ধ হবে, তার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সংঘর্ষ শুরু হয়। আরাকান আর্মির সঙ্গে টিকতে না পেরে ৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বিজিপির ৩০২ জন সদস্যসহ ৩৩০ জন। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের সবাইকে ফেরত পাঠানো হয়। মূলত সীমান্তচৌকি দখল ও পুনরুদ্ধারকে ঘিরে সংঘর্ষগুলো চলছে। বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন সাতটির বেশি চৌকি এখন আরাকান আর্মির দখলে আছে। চৌকিতে আরাকান আর্মির সদস্যদের পাহারা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত থেকে খালি চোখে দেখা যায়।
টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, টানা ১২ দিন মংডুর উত্তর ও দক্ষিণের কয়েকটি গ্রামে গুলি, শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমা ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ ঘটছে। তাতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে মংডু টাউনশিপসহ উত্তর দিকের কুমিরখালী, বলিবাজার, নাকফুরা, নাইচাডং, কোয়াচিডং, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপ্রুসহ কয়েকটি গ্রাম।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, গত সোমবার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৭৯ জন বিজিপি সদস্যকে নিরস্ত্র করে ১১ বিজিবির ব্যাটালিয়ন-সংলগ্ন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ চলছে বিজিবির তত্ত্বাবধানে। পাশাপাশি তাঁদের আঙুলের ছাপসহ তথ্যভান্ডার তৈরির কাজ করা হবে। এরপর তাঁদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এখন শান্ত আছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।