অপহরণের ৪ দিন পর ‘মুক্তিপণ’ দিয়ে ছাড়া পেল ৫ রোহিঙ্গা কিশোর

কক্সবাজার জেলার মানচিত্র

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া নেচার পার্কে ঘুরতে গিয়ে অপহরণের শিকার পাঁচ রোহিঙ্গা কিশোর পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে। সন্ত্রাসীদের দাবি করা মুক্তিপণ দেওয়ার পর গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ওই কিশোরদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি করেছে পরিবারগুলো।

ফেরত আসা কিশোরেরা সবাই টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা। তারা হলো আশ্রয়শিবিরের সি ব্লকের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. বেলাল (১৩), মোহাম্মদ ইলিয়াসের ছেলে নূর কামাল (১২), মো. উবায়দুল্লাহর ছেলে নূর আরাফাত (১২), বি ব্লকের মো. রফিকের ছেলে ওসমান (১৪) এবং ডি ব্লকের মাহাত আমিনের ছেলে নুর কামাল (১৫)।

এই কিশোরদের ফিরে আসার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সুপার মো. জামাল পাশা।

আরও পড়ুন

২৪ এপ্রিল দুপুরে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোরার ওই পার্ক এলাকা থেকে এই কিশোরদের ধরে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ভুক্তভোগী কিশোরদের স্বজনদের দাবি, ঈদ উপলক্ষে ওই কিশোরেরা আশ্রয়শিবির থেকে ঘুরতে বেরিয়েছিল। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের অপহরণের পর মুঠোফোনের মাধ্যমে মুক্তিপণ হিসেবে জনপ্রতি চার লাখ করে মোট ২০ লাখ টাকা দাবি করে। গত চার দিন তাদের সঙ্গে দর-কষাকষির পর জনপ্রতি এক লাখ টাকা একটি নির্ধারিত স্থানে রেখে আসেন স্বজনেরা। পরে অপহৃত কিশোরদের রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা বলেন, মুক্তিপণ দাবির বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তাঁদের কিছুই জানায়নি। এর মধ্যে কিশোরদের উদ্ধারের জন্য পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা দিন-রাত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান। হয়তো অভিযানের কারণে সন্ত্রাসীরা তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

ওই আশ্রয়শিবিরের ব্যবস্থাপনার কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশের পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানা আছে। আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। সন্ত্রাসীরা ভুক্তভোগী পরিবারে ফোন দিয়ে জনপ্রতি চার লাখ করে মুক্তিপণ দাবি করলেও জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে আদায় করেছে। তাদের দাবি করা মুক্তিপণের টাকা না পেলে অপহৃত কিশোরদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সন্তানদের জীবন রক্ষার্থে প্রশাসনের অগোচরে মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত আনা হয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণের ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী কিশোরদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ দেওয়া হয়নি। এরপরও পুলিশ ওই কিশোরদের উদ্ধারের জন্য দিন-রাত অভিযান চালিয়েছে।

গত ৬ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬২ জন ব্যক্তিকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকি ২৮ জন রোহিঙ্গা। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে।