‘টাঙ্গাইলের মিষ্টি’ বললেই নাম আসে চমচম আর পাঁচআনি বাজারের
টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনি বাজারের পরিচিতি ‘মিষ্টিপট্টি’ হিসেবে। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই বাজারে ছোট-বড় ২০টি মিষ্টির দোকান আছে। এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ মণ মিষ্টি বিক্রি হয়।
গত শুক্রবার মিষ্টিপট্টিতে কথা হয় শামীম হাসান নামের একজন ক্রেতার সঙ্গে। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলে। চাকরিসূত্রে থাকেন ঢাকার উত্তরায়। ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। ফেরার পথে চমচমসহ নানা পদের মিষ্টি কেনার জন্য এসেছেন এখানে। বললেন, ‘বাসার সবাই টাঙ্গাইলের চমচমের ভক্ত। টাঙ্গাইলে এলেই চমচম নিয়ে যাই।’
আবদুর রহিম রচিত ‘টাঙ্গাইলের ইতিহাস’ বই থেকে পাঁচআনি বাজার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জানা যায়। ১৮৬৯ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। মহকুমা প্রতিষ্ঠার পর শহরে বসতি বাড়তে থাকে। তখন প্রয়োজন দেখা দেয় বাজারের। সন্তোষের পাঁচআনির জমিদার বিন্দুবাসিনী চৌধুরানী তাঁর প্রজাদের বেচাকেনার সুবিধার জন্য বাজারটি গড়ে তোলেন। পাঁচআনি জমিদারের প্রতিষ্ঠিত বাজার, তাই এটি পাঁচআনি বাজার নামে পরিচিতি পায়। অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারটি জমজমাট হয়ে ওঠে।
বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুরুতে পরেশ চন্দ্র কর নামে একজন পাঁচআনি বাজারে প্রথম স্থায়ী মিষ্টির দোকান দেন। এরপর খোকা ঘোষ ১৯৩৯ সালে দেন ‘জয়কালী মিষ্টান্ন ভান্ডার’ নামের এক মিষ্টির দোকান। পরে আরও কয়েকজন বেশ কয়েকটি দোকান দেন এই বাজারে। এভাবে মিষ্টির দোকানের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে একসময় বাজারের উত্তর–পূর্ব অংশটি ‘মিষ্টিপট্টি’ নামে পরিচিতি পায়।
বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানেরই নিজস্ব কারখানা আছে। দিনে চরাঞ্চল থেকে দুধ সংগ্রহ করেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। এই দুধ দিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় মিষ্টি তৈরির কাজ। গভীর রাত পর্যন্ত চলে মিষ্টি তৈরি। সকাল থেকে শুরু হয় মিষ্টি বিক্রি। এখানে বিভিন্ন রকম মিষ্টি, দই ও ঘি বানানো হলেও সবচেয়ে বেশি চলে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী চমচম। সারা দেশেই এই চমচমের সুনাম আর চাহিদা।
বাজারের গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডারের মিষ্টি তৈরির কারিগর নিখিল পাল। তিনি ৩০ বছর ধরে এই বাজারে মিষ্টি তৈরির কাজ করছেন। তিনি বলেন, মূলত চমচম এই বাজারের প্রধান মিষ্টি। এক মণ চমচম তৈরি করতে দেড় মণ দুধ, ৩০ কেজি চিনি ও ৯০০ গ্রাম ময়দার প্রয়োজন হয়। প্রতি কেজি চমচম এখন ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। বাজারের অন্য মিষ্টির মধ্যে আছে রসগোল্লা, কালোজাম, সন্দেশ, রসমালাই ও মালাইকারি।
গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার ৭০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাধা বল্লভ দাস। এখন এই দোকান পরিচালনা করেন তাঁর ভাতিজা গোপাল চন্দ্র দাস ও তাঁর ছেলেরা। গোপাল চন্দ্র দাসের ছেলে দ্বীপ দাস বলেন, তাঁদের দোকানে প্রতিদিন সাত থেকে আট মণ চমচম বিক্রি হয়। পাশাপাশি অন্যান্য মিষ্টি ও দই বিক্রি হয়। করোনার সময় থেকে বেচাবিক্রি কমেছে বলে দাবি তাঁর।
খোকা ঘোষের প্রতিষ্ঠিত ‘জয়কালী মিষ্টান্ন ভান্ডার’ এখন পরিচালনা করেন তাঁর ছেলে স্বপন কুমার ঘোষ। তিনি টাঙ্গাইল জেলা রেস্তোরাঁ ও মিষ্টি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী চমচমের প্রধান কেন্দ্র এই পাঁচআনি বাজারের মিষ্টিপট্টি। এখান থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চমচম সরবরাহ করা হয়। এই বাজারে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৫০ মণ মিষ্টি বিক্রি হয়।