মুন্সিগঞ্জে আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে পথচারী নিহত
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
নিহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন মোল্লা (৬৫)। তিনি সদর উপজেলার বকুলতলা এলাকার বাসিন্দা।
সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যা সাতটার দিকে ছররা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ১১ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে এঁদের মধ্যে ফরহাদুল ও মনির হোসেন মোল্লা নামের দুজনের অবস্থা গুরুতর ছিল।
বাবা বয়স্ক মানুষ আসরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। তাঁদের গুলিতে তিনি মারা গেলেন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এলাকা প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ এবং ইউনিয়নটির ২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি আলী হোসেনের অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। তাঁদের মধ্যে একাধিকবার সংষর্ষও হয়। সোমবার দুপুরে ইউনিয়নটির বকুলতলা এলাকায় দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাঁরা সংঘর্ষে জড়ান। বিকেলের দিকে উভয়পক্ষ গোলাগুলি শুরু করে। এ সময় তাঁদের ছোড়া গুলিতে স্থানীয় ১৫ থেকে ২০ জন আহত হন।
সুরুজ ও আলী হোসেনের দ্বন্দ্ব অন্তত ১০ বছরের। দুটি পক্ষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মীমাংসা করতে অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে।
নিহত মনির হোসেনের মেয়ে সামিয়া আক্তার বলেন, আধারা ও সোলার চর গ্রামের মানুষজন বকুলতলা গ্রামে এসে ঝগড়ায় জড়ায়। একপর্যায়ে তাঁরা গোলাগুলি শুরু করেন। তাঁর বাবা বয়স্ক মানুষ আসরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। তাঁদের গুলিতে তিনি মারা গেলেন। যাঁদের গুলিতে তাঁর বাবা মারা গেলেন, তিনি তাঁদের বিচার চান।
সুরুজ ও আলী হোসেনের দ্বন্দ্ব অন্তত ১০ বছরের জানিয়ে আধারা ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুটি পক্ষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মীমাংসা করতে অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে। পক্ষ দুটি খুব উগ্র। কারও কথাই শোনে না। বারবার তাঁরা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় আবারও সংঘর্ষে জড়ালেন। তাঁদের গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে একটি নিরীহ মানুষ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারা গেল।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ মুঠোফোন বলেন, তাঁর লোকজনের সঙ্গে আলী হোসেনের লোকজনের সংঘর্ষ হয়নি। ইউনিয়নটির পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হক মোল্লার লোকজনের সঙ্গে আলী হোসেনদের টাকাপয়সা এবং পাওনা-দেনা নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না। আর আলী হোসেন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হক মোল্লা বলেন, তিনি অসুস্থ। দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসা করে এখন ঢাকায় আছেন। সংঘর্ষের বিষয়টি নিয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।