রূপগঞ্জে আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগ

অপরাধ
প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সদস্য বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে রফিকুল ইসলাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণের  অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কায়েত পাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ‘চনপাড়া মোড়’ (অটোরিকশা স্ট্যান্ড) থেকে রফিকুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।

রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। তিনি কায়েত পাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা। তিনি চনপাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি প্রার্থী। আর বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নয় নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান।

রফিকুলের বোন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আজ সকালে কাজের খোঁজে চনপাড়া মোড়ে গেলে বজলুর রহমান তাঁকে তুলে নিয়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তাঁরা জেনেছেন। বজলুর রহমান তাঁর এক প্রতিনিধির মাধ্যমে রফিকুলের মুক্তিপণ হিসেবে চার লাখ টাকা দাবি করেছেন।

রফিকুলের বোন বলেন, ‘ছয় সদস্যের পরিবারে আমার ভাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাবা দুবার স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী। ভাইয়ের অপহরণের খবর শুনে বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।’ এর আগে ১ সেপ্টেম্বর বজলুর রহমান তাঁর লোকজন নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, বজলুর রহমান বিভিন্ন সময় ভিন্ন মতের রাজনীতিতে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে গিয়ে মারধর করে ছেড়ে দেন।

ঘটনাস্থলে থাকা দুজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা দুজন চনপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সী যুবক। তাদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে রফিকুল চনপাড়া মোড়ে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখনই মেম্বার সাহেবের সাদা রঙের প্রাইভেটকারটা আইসা সেখানে থামে। তিনি গাড়ি থেকে রফিকুলকে কাছে যেতে ডাকেন। রফিকুল কাছে গেলে তাঁকে জোর করে গাড়ির ভেতর তুলে নেন তিনি। এ সময় মেম্বার সাহেবের সঙ্গে তাঁর তিনজন অস্ত্রধারী বডিগার্ড ছিল। মেম্বার সাহেবের পেছনে একটি লেগুনা ছিল। লেগুনায় চারজন পুলিশের পোশাক পরা লোক ছিলেন।’ এই মেম্বার সাহেব কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনি নয় নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার, বজলু ভাই।’ গাড়িতে তুলে নেওয়ার সময় বজলুর রহমান সাদা রঙের শার্ট পরা ছিলেন বলে দুই প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে চনপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হারুন মিয়াজি বিকেল পাঁচটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রফিককে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা দলের পক্ষ থেকে পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু ঘটনার প্রায় সাত ঘণ্টা পার হলেও রফিকের কোনো সন্ধান পাইনি। রফিকের মুক্তিপণ হিসেবে পরিবারের কাছে চার লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে।’

অভিযোগের বিষয়ে দুপুর একটার দিকে বজলুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন পরিষদে আছি। এমন কিছু করিনি।’ গাড়িতে তুলে নেওয়ার বিষয়ে পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি তাঁকে চিনি না। তাদের (পরিবারকে) বলেন আমার গাড়ি চেক করতে।’ পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সংবাদকর্মী পরিচয়ে তাঁকে কল করা হলে তিনি ফোনের কারণ সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় রফিকুলের নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কল কেটে দেন। পরে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

অভিযোগ বিষয়ে কথা বলতে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

পরে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) আবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি প্রথম জানতে পারলাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’