নাটোরে মুখোশধারীদের সশস্ত্র হামলা, পুলিশের বাধায় বিএনপির সংক্ষিপ্ত পদযাত্রা
নাটোরে মুখোশধারীদের দফায় দফায় সশস্ত্র হামলায় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। পথে পথে হামলার কারণে আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি করতে পারেনি দলটি।
পরে বেলা পৌনে একটার দিকে নাটোর শহরের আলাইপুরে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে পুলিশের বাধার মুখে ১০ মিনিটের মধ্যে সেই পদযাত্রা শেষ হয়।
বিএনপির দাবি, মুখোশধারীরা আওয়ামী লীগের ‘মাস্তান লীগের’ সদস্য। তারা মারধরের পাশাপাশি প্রকাশ্যে ছিনতাই করছে। বিএনপি তাদের প্রতিহত করে পদযাত্রা করেছে। পুলিশের বাধার মুখে পদযাত্রা দ্রুত শেষ করতে হয়েছে।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের দাবি, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের পদধারী কেউ নন। বিএনপি থেকে আসা একজন বিশেষ ব্যক্তির অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এসব ঘটনার দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। তারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দেওয়ান শাহীন বলেন, আওয়ামী লীগের ‘মাস্তান লীগের’ ছেলেরা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় আজ প্রকাশ্যে ছিনতাই–রাহাজানি করেছে। তারা মুখে বলছে, শোকের মাসে তারা কিছু করবে না। কিন্তু মুখোশ পরে তারাই বিএনপির পদযাত্রায় অংশ নিতে আসা নেতা–কর্মীদের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। মুঠোফোন ও টাকা লুটপাট করেছে। পুলিশ এসব ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
জেলা বিএনপির ভাষ্য, আজ সকাল নয়টায় শহরের আলাইপুরে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে থেকে কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেই মোতাবেক সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতা-কর্মীরা শহরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু পথে পথে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা তাঁদের ওপর হামলা করেছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত হামলায় অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১২ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, দিনের প্রথম ঘটনাটি ঘটে সকাল আটটায় নাটোর চিনিকল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায়। কালো বড় মাইক্রোবাসে ১০ থেকে ১২ জন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত বড় বড় হাঁসুয়া ও লাঠি নিয়ে বিএনপি নেতাদের ওপর হামলা করে। এখানে সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোস্তফা আনাম ও কাফুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি তুহিন হোসেনের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁদের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মুঠোফোন ও টাকা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পরে হালসা, স্বর্ণপট্টি মোড়, বিদ্যুৎ অফিসের সামনে ও স্টেশন এলাকায় বিএনপি নেতা–কর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। এসব হামলায় গুরুতর আহত জেলা যুবদলের সহপ্রচার সম্পাদক সুজাইল সুজা, কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সম্পাদক কামাল হোসেন, হালসা ইউনিয়ন যুবদলের সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, খাজুরা ইউনিয়ন যুবদলের সম্পাদক জাকির হোসেন, লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রেজাউল করিম, ওবায়দুল কবীর, হালসা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফিরোজ হোসেন, সম্পাদক মো. মোস্তাক, জেলা মৎস্যজীবী দলের সদস্য মোজাম্মেল হোসেন, সদস্য শরিফুল ইসলাম ও ওবায়দুল কবীরকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, শোকের মাস হওয়ায় তাঁরা বিএনপির কর্মসূচিতে পাল্টা কর্মসূচি দেননি। অথচ নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের একজন বিশেষ নেতার কিছু হাইব্রিড অনুসারী চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগের বদনাম কুড়াচ্ছে। এর দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছি। অথচ আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কর্মসূচি না দিয়ে আমাদের নেতা–কর্মীদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা ও অর্থসম্পদ ছিনতাই করেছে। রাজনৈতিক শিষ্টাচারের সামান্যতম অংশ তারা রক্ষা করেনি। পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার নিন্দা জানাই।’