অন্য খবর
ছাদে শ্বেতচন্দনের বনসাই রাজ্য
তিনটি বাড়ির ছাদে চার শতাধিক বনসাই রয়েছে সাজ্জাদ হোসেনের । এর মধ্যে আড়াই শর বেশি রয়েছে শ্বেতচন্দন।
ছাদের ওপর থরে থরে সাজানো থালা। সেসব থালা ভর্তি মাটি। মাটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে ছোট ছোট গাছ। চারদিকে সবুজের সমারোহ। বাড়ির ছাদে এমন দৃষ্টিনন্দন শ্বেতচন্দনের বনসাই বাগান করেছেন সাজ্জাদ হোসেন (৪১)।
সাজ্জাদ হোসেনের বাড়ি যশোর শহরের বাগমারা পাড়া এলাকায়। একান্নবর্তী পরিবারের তিনটি বাড়ির ছাদে চার শতাধিক বনসাই রয়েছে তাঁর। সেখানে শোভা পাচ্ছে শ্বেতচন্দন, বট, পাকুড়, অ্যাডোনিয়াম, অশ্বত্থ, তেঁতুল, অর্জুন ও বাগানবিলাস। এর মধ্যে আড়াই শর বেশি রয়েছে শ্বেতচন্দন।
বিদ্যালয়ে পড়ার সময় বনসাইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় সাজ্জাদ হোসেনের। পড়ালেখা শেষ না করে ২০০৭ সালে তিনি মালয়েশিয়া চলে যান। সেখানে তিনি এক চীনা নাগরিকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নান্দনিকভাবে সাজানো ১৭টি বনসাই দেখতে পান।
সেগুলোর মধ্যে ছিল চায়না বট, তেঁতুল ইত্যাদি। বনসাইগুলো তাঁকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। সেগুলো দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে ফিরে বনসাই বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন সাজ্জাদ।
২০১০ সালে সাজ্জাদ হোসেন দেশে ফিরে আসেন। সাজ্জাদ বলেন, প্রথমে তিনি কিছু জমি লিজ নিয়ে স্ট্রবেরি ও সবজি চাষ শুরু করেন। কিন্তু ওই কাজে সফল হননি। ২০১৩ সালে জানুয়ারিতে বট, পাকুড় ও অশ্বত্থের চারা সংগ্রহ করে বনসাই বাগান তৈরির কাজ শুরু করেন।
এরপর তিনি সন্ধান পান শ্বেতচন্দনের। যশোর সদর উপজেলার বন বিভাগের ঝুমঝুমপুর এলাকার নার্সারি থেকে ১০টি শ্বেতচন্দনের চারা সংগ্রহ করেন। এখন তিনি নিজেই চারা তৈরি করেন। বর্তমানে তাঁর বাগানে ৮ বছর বয়সী ৪০টি, ৭ বছর বয়সী ৬৫টি, ৭ বছর বয়সী ৭০টি এবং ৪ বছর বয়সী ৭০টি শ্বেতচন্দনের বনসাই রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বাগানে রয়েছে দেড় শতাধিক বট, পাকুড়, অ্যাডোনিয়াম, অশ্বত্থ, তেঁতুল, অর্জুন ও বাগানবিলাসের বনসাই। আট বছরের একটি শ্বেতচন্দন বৃক্ষের দাম লাখ টাকার বেশি।
বনসাই তৈরিতে সাজ্জাদ হোসেন কারও কাছে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ নেননি। শুরুর দিকে নিয়মিত যাতায়াত করতেন যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে। ঘেঁটেছেন এ–সংক্রান্ত বই। এসব বই-পুস্তক ও ম্যাগাজিন থেকে বনসাই তৈরির প্রণালি, গাছের খাবার ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা নেন। সে অনুয়ায়ী তিনি মাটি তৈরি করেন।
এ ছাড়া বাড়ির বারান্দায় বনসাইয়ের ল্যাব তৈরি করেছেন সাজ্জাদ। এই ল্যাবে মাটি তৈরি করেন তিনি। বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি মাটিতে প্রথমে একটি গাছ এনে তিনি পরীক্ষা করেন। তিনি গাছে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করেন না। রোগবালাই দেখা দিলে মেহগনির পাতা পচানো পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে গাছে ছিটিয়ে দেন।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘শ্বেতচন্দন এখন বিলুপ্তপ্রায়। আমি চেয়েছি, ঔষধি গুণের খনি ভেষজ শ্বেতচন্দন বৃক্ষটি মানুষের হাতের নাগালেই থাকুক। এই বৃক্ষের কষ অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে কাজ করে। শ্বেতচন্দনে রয়েছে সুগন্ধ।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ওই বাগান দেখলে সবার বনসাইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে। এটা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।