ছুটিতে কক্সবাজার এসেছেন সাড়ে তিন লাখ পর্যটক

কক্সবাজার সমদ্রেসৈকতে পযটকের উপচে পরা ভিড়। আজ দুপুরে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টছবি-প্রথম আলো

গত ২৮ অক্টোবর থেকে হরতাল-অবরোধের কারণে তেমন পর্যটক ছিল না কক্সবাজারে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও বিজয় দিবস পরপর পড়ে যাওয়ায় ঢাকা–চট্টগ্রামসহ সারা দেশ থেকে বেড়াতে এসেছেন প্রচুর পর্যটক। গত বৃহস্পতিবার থেকেই বাড়তে শুরু করেছে পর্যটক। এই তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসেছেন অন্তত সাড়ে ৩ লাখ পর্যটক। এতে জমে উঠেছে পর্যটককেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যও। তবে সৈকতের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ পর্যটকের।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার তিন দিনে দৈনিক গড়ে ১ লাখ পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন। আজ রোববার সৈকতের পাঁচ শতাধিক হোটেল-গেস্টহাউসে অবস্থান করছেন ৭০ হাজারের বেশি পর্যটক। যা আগের দিন শনিবার ছিল লাখের কাছাকাছি।

গতকাল শনিবার সকালে কক্সবাজার পৌঁছে কলাতলীর একটি হোটেলে ওঠেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৪০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা বলে ৩ হাজার টাকার কক্ষভাড়া আদায় করা হয়েছে ৪ হাজার টাকা। তখন অন্য হোটেলে ছোটাছুটি করার মতো সময়ও হাতে ছিল না তাঁর। বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়ে হোটেল মালিকেরা পর্যটকদের হয়রানি করছেন।

শুক্রবার রাতের ট্রেনে পরিবার নিয়ে ঢাকার সিদ্দিরগঞ্জের ব্যবসায়ী নাজমুল হুদা কক্সবাজার আসেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর হোটেলে বসে সময় কাটানো ছাড়া বিনোদনের কিছু নেই। রাতের বেলা সৈকত অন্ধকার হয়ে পড়ে। এ সময় বখাটে ও ছিনতাইকারীর উৎপাত চোখে পড়ে।

সৈকতে বেড়ানোর ফাঁকে বালু নিয়ে খেলায় মেতে উঠেছেন পর্যটকেরা। আজ দুপুরে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট
ছবি-প্রথম আলো

ঝুঁকি নিয়ে গোসল

আজ রোববার সকালে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা যায় মানুষের ভিড়। বেশির ভাগ মানুষ সমুদ্রের পানিতে গোসলে ব্যস্ত। সুগন্ধার উত্তরে সিগাল ও লাবণী এবং দক্ষিণ দিকের কলাতলীর পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের ভিড়। ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে নামতে নিষেধ করে একাধিক লাল নিশানা ও সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। প্রচারণা চালাচ্ছেন টুরিস্ট পুলিশ ও সৈকত কর্মীরা। কিন্তু সেদিকে কারও নজর নেই।

সর্বশেষ গত ৩ ডিসেম্বর দুপুরে সৈকতের সিগাল পয়েন্টে গোসলে নেমে নাটোরের এক দম্পতি সাবিকুন্নাহার ও বোরহান উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। গত ১৮ বছরে সমুদ্রে নেমে ১২৪ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরামের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, লোকসমাগম বাড়লে ব্যবসা ভালো হয়। কিন্তু পর্যটকের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চিন্তা কারও নেই। ১২০ কিলোমিটার সৈকতের ১১৫ কিলোমিটার অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা নেই। সমুদ্রে গোসলে নেমে কেউ মারা গেলে দায় দায়িত্বও নেয় না কেউ।

বেসরকারি সি সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, কলাতলী থেকে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে কেউ নিখোঁজ হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো ২৬ জন লাইফগার্ড আছেন। অবশিষ্ট ১১৫ কিলোমিটার সৈকতে কোনো লাইফগার্ড নেই।

কক্ষভাড়া ও খাবারের দাম বেশি

লাখো পর্যটকের সমাগমকে ঘিরে হোটেল-রেস্তোরাঁতে অতিরিক্ত কক্ষভাড়া ও খাবার দাম বেশি আদায়ের অভিযোগ পর্যটকদের। রেস্তোরাঁয় খাবারের অতিরিক্ত দাম আদায় হচ্ছে জানিয়ে রাজধানীর ফতুল্লার ব্যবসায়ী গোলাম কাদের বলেন, ২০০ টাকার দুপুরের খাবার এখন ৪০০ টাকা চাইছে। ৫০ টাকার টমটম (ইজিবাইক) ভাড়ায় ২০০-৩০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দেখার কেউ নেই।

সৈকত ও শহর এলাকায় রেস্তোরাঁ আছে পাঁচ শতাধিক। অতিরিক্ত খাবারের দাম আদায় প্রসঙ্গে কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বলেন, সমিতির আওতাধীন ১২০টি রেস্তোরাঁতে খাবারের মূল্য তালিকা টেবিলে রাখা হয়। পর্যটকেরা তালিকা দেখে খাবারের অর্ডার করেন। কিন্তু রাস্তাঘাটে যে সব রেস্তোরাঁ ও ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়ি দোকান আছে তাতে তালিকা থাকে না। ইচ্ছামতো দাম আদায় করা হয়। এসব রেস্তোরাঁর লাইসেন্সও নাই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। অতিরিক্ত কক্ষভাড়া, খাবারের দাম বেশি আদায়সহ ভোগান্তি রোধে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট অভিযোগ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। হয়রানির শিকার লোকজন সেখানে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।