রাজশাহী নগর ভবনে দুদকের অভিযান, ঠিকাদারের ঠিক নেই

রাজশাহী নগর ভবনের সংস্কারকাজের অনিয়মের খবরে দুদকের অভিযান। বৃহস্পতিবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সংস্কারকাজের অনিয়মের খবরে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইনের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নগর ভবনে চলমান সাতটি কাজের ঠিকাদারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি সিটি কর্তৃপক্ষ। তিনটি কাজের ঠিকাদারের কাগজপত্র দেখালেও একজন ঠিকাদারের নম্বরে ফোন করে দুদক জানতে পারে, তিনি কোনো ঠিকাদারই নন। কোথাও কাজের জন্য দরপত্রও দেননি। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরে।

সংস্কারকাজে অনিয়ম নিয়ে গত সোমবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘দরপত্র ছাড়াই নগর ভবন সংস্কার, ঠিকাদার বিএনপি নেতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অভিযানে যে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া গেছে, তার একটি ‘মাইসা এন্টারপ্রাইজ’। ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইয়াহিয়া খান (মিলু) বিএনপির একজন নেতা।

সংস্কারকাজে অনিয়মের অভিযোগে নগর ভবনের প্রকৌশল শাখায় দুদকের অভিযানের সময় দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখেও সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে পারেননি। অভিযানে ছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ সিদ্দীক ও উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান।

দুদকের অভিযানের সময় বিল দেওয়া হয়েছে এমন তিনটি কাজের কাগজপত্র দেওয়া হয় দুদক কর্মকর্তাদের। আর চলমান সাতটি কাজের কোনো কাগজপত্রই সরবরাহ করতে পারেননি প্রধান প্রকৌশলী। কার্যাদেশ ছাড়াই ঠিকাদার কীভাবে কাজ করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তা আমির হোসাইন বলেন, তাঁরা ফরিদা ইয়াসমিন, মাইসা এন্টারপ্রাইজ ও শাহরিন এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাগজ পেয়েছেন। মাইসা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইয়াহিয়া খান। শাহরিন এন্টারপ্রাইজের কাগজপত্রে স্বত্বাধিকারী হিসেবে এম এম মাহফুজুর রহমানের নাম লেখা আছে। তবে মোবাইল নম্বরে কল করলে জানা যায়, নম্বরটি তাঁর নয়। চাঁদপুরের এক ব্যক্তি ফোন ধরে বলেন, তিনি ঠিকাদার নন। কোনো দরপত্রে অংশ নেননি।

শাহরিন এন্টারপ্রাইজ ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪০ টাকার কাজ করেছে। এ কাজের কাগজ জাল হিসেবে মনে করা হচ্ছে জানিয়ে আমির হোসাইন বলেন, ‘যারা কাজ পেয়েছে, একই ব্যক্তি মনে হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর আলাদা নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাছাকাছি দর দাখিল করেছে। তারা কাজ পেয়েছে। পিপিআর অনুযায়ী প্রতিযোগিতা হতে হবে। এখানে সঠিক প্রতিযোগিতা হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘কাগজ দেওয়ার জন্য আমাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়েছেন। কিন্তু মাত্র তিনটা ফাইল আমাদের দিয়েছেন। আর আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এখনো সাতটা কাজ চলমান। সিটি করপোরেশন তিনটি কাজের ফাইল দিতে পেরেছে। কিন্তু এই সাতটা কাজের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। অলরেডি কাজের হাফ ডান।’

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পরপরই সিটি করপোরেশনে হামলার ঘটনা ঘটে। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় নগর ভবনে। এতে ২১ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষয়ক্ষতির সংস্কারকাজ চলছে।

গত রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা নগর ভবনে গ্লাস লাগানোর কাজ করছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও নগরের দড়িখড়বোনা এলাকার বিএনপি নেতা ইয়াহিয়া খান এ কাজের ঠিকাদার। ভবনের তৃতীয় তলায় মেয়রের দপ্তরে নতুন টাইলস বসানো হচ্ছে। রেজাউল নামের একজন ঠিকদার এ কাজের সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়েছেন।

সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়েছে, ‘রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন মেথডে’ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কাজ বিনা টেন্ডারে করা যায়। এ ছাড়া দরপত্র ছাড়া কাজ করার আরও অনেক পদ্ধতি আছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন ওই দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে সংস্কারকাজ করছে। এটা বিদেশি তহবিল বা সরকারি তহবিলের টাকা নয়। এরপরও ২০০৮ সালের পিপিআর মেনেই কাজ করা হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার দুদকের অভিযানের পরে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, দুদক তাদের মতো বক্তব্য দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা নিয়ম মেনেই কাজ করছেন।