আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় যা জানা গেল
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধ দীর্ঘদিনের। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণায় সেই কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে প্রকাশ্যে। কোন্দলের কারণে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা এত দিন একে অপরের সমালোচনা করতেন। তবে বর্তমানে সমালোচনার জবাবে লাঞ্ছনা ও মারধরের মতো ঘটনা ঘটছে। অন্তর্দলীয় দ্বন্দ্বের কারণেই রাজৈরে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয় বলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন।
গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আবদুস সালামকে বেদম পিটুনি দিয়ে পুকুরে ফেলে দেন ছাত্রলীগের ‘নামধারী’ নেতা-কর্মীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান ওরফে পল্লবীর উপস্থিতিতে তাঁর দুই ছেলের নেতৃত্বে তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তবে ফরিদা হাসানের দাবি, ঘটনার সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের হয়ে খন্দকার আবদুস সালাম বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য দিতেন। বক্তব্যে তিনি প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কঠোর সমালোচনা করতেন। এমনকি অকথ্য ভাষাও ব্যবহার করতেন তিনি। ওই বক্তব্যের জেরে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে মামলাও হয়েছে। এরপরও তাঁকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে লাঞ্ছনা করা হলো। এখন দুই পক্ষের বিরোধ আরও বাড়বে।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগ দুটি ভাগে বিভক্ত। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দের সমর্থিত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেকেন্দার আলী শেখ ও সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন খান। অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খান–সমর্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক শাহাবুদ্দিন শাহ। আওয়ামী লীগ ছাড়াও উপজেলায় দলটির সহযোগী সংগঠনগুলোরও পাল্টা কমিটি আছে। মারধরের শিকার খন্দকার আবদুস সালাম জেলা আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন খান বলেন, ‘রাজৈরে আওয়ামী লীগের একটি ভুয়া কমিটির কারণে আমরা বিব্রত হচ্ছি। ওই কমিটি কে অনুমোদন দিয়েছে? কেউ দেয়নি। তবু স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাব থাকায় একটি মহল দাবি করছে, তারা উপজেলার নেতা। তাহলে আমরা কারা? ভুয়া কমিটির বিষয়ে কথা বলায় আমাদের এক নেতাকে একা পেয়ে পিটিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়া হলো। এত বড় জঘন্য কাজ করে তারা এখন গলাবাজি করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, খন্দকার আবদুস সালামকে পেটানোর সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন। তাঁর ছেলেরা তাঁকে মেরেছে কি না, সেটা তিনি জানেন না।
ফরিদা হাসান আরও বলেন, ‘আমি তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসা নারী। যারা আমাকে নামধারী আওয়ামী লীগ বলে, তারাই নামধারী। রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩ বছরের কমিটি হলেও ২৬ বছর ধরে সম্মেলন হয় না। কমিটির ৫১ জনের মধ্যে অনেকেই মারা গেছেন। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে উপজেলা কমিটি। ওই কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁরাই এখন নামধারী হয়ে গেছেন। আমরা আমাদের কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা করছি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, রাজৈরে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে যাঁরা নোংরা রাজনীতি করছেন, তাঁরা সবাই স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের অনুসারী। তাঁর প্রভাবেই তাঁরা নোংরামি করছেন। এর প্রমাণ উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুস সালামকে প্রকাশ্যে পেটানো।
গোটা উপজেলায় উত্তেজনা
আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আবদুস সালামকে প্রকাশ্যে মারধর ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন, এলাকাবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। গত বুধবার উপজেলার কালীবাড়ি এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়া উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সভা করা হয়েছে। এ ঘটনায় গোটা উপজেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভকারী নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা আবদুস সালামের মতো দলের জ্যেষ্ঠ একজন নেতাকে চরমভাবে লাঞ্ছিত করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলা দেওয়া হয়। অসুস্থ একজন মানুষের সঙ্গে প্রকাশ্যে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যাঁরা করেছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের শত্রু। এ সময় হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।