বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগে শূন্য ঘোষিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় নৌকার মাঝিরা হেসেখেলেই নির্বাচনী বৈতরণি পার হবেন, এমনটাই মনে করছিলেন অনেকে। তবে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের উপস্থিতিতে বদলে যাচ্ছে সমীকরণ। দলটির নেতা-কর্মীদের একাংশ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও এতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখছেন না আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা বলছেন, দলে নীতিমান নেতার সংকট থাকায় ব্যক্তিস্বার্থে অনেকে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হচ্ছেন। শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন বলে নেতারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মু. জিয়াউর রহমান। এ আসনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মু. খুরশিদ আলম ওরফে বাচ্চু এবং রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নৌকার প্রার্থী মু. জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় আনুগত্যের বাইরে গিয়ে ‘বিদ্রোহী’ হওয়া চরম অন্যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে দুজন নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে খুরশিদ আলম গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং মোহাম্মদ আলী সরকার আগে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য থাকলেও বর্তমানে কোনো পদে নেই। তিনি এর আগে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। রাজশাহীতে তাঁর কোনো পদ-পদবি আছে কি না, তাঁর জানা নেই।
বিদ্রোহী প্রার্থী মু. খুরশিদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এমপি হয়ে জনসেবা করার জন্য রাজনীতি করি। এ জন্য আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলাম। দলের কাছে মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। তাই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছি। হয়তো দল আমাকে বহিষ্কার করবে। তবে মাঠে বিএনপি নেই। ফাঁকা মাঠে কি নির্বাচন জমে? প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে দলেরই উপকার হবে। নির্বাচিত হলে দলের জন্য কাজ করব।’ এ আসনের আরেক প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকারের মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল হক। যদিও কাগজে-কলমে তিনি ‘বিদ্রোহী’ নন, তবু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ তাঁকে সমর্থন দিতে দেখা গেছে। এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সামিউল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল ওদুদ প্রথম আলোকে বলেন, দলের একটি অংশের ইন্ধনে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল হক প্রার্থী হয়েছেন। ঢাকায় অবস্থানরত একজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সামিউলকে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। তবে তিনি ওই সরকারি কর্মকর্তার পরিচয় প্রকাশ করেননি।
এ বিষয়ে সামিউল হক প্রথম আলোকে বলেন, পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তিনি বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তবে তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা করার ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু ক্ষমা পাওয়ার জন্য তিনি দরখাস্ত করেননি। তাই বিদ্রোহী না বলে স্বতন্ত্র প্রার্থী বলাই ভালো। আওয়ামী লীগের একটি অংশের সমর্থনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমি জানি না। সব দলের ভোটাররা আমাকে ভোট দিতে পারেন। আমি সেটা মাথা পেতে নেব।’
দলের তৃণমূলের কয়েক কর্মী-সমর্থক জানান, দলে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নির্বাচনে সমস্যা হতে পারে। ভোটে জেতার জন্য তাঁরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের কথা বলবেন। এতে সাধারণ ভোটাররা বিভ্রান্ত হবেন।
সামিউলকে দলের একটি অংশের গোপনে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবদুস সামাদ বলেন, দলের যে অংশ তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে, দলে তাঁদের আনুগত্য প্রশ্নবিদ্ধ। আদর্শিক অবস্থান থেকে এটা মোটেও কাম্য নয়। একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমরান ফারুক মাসুম।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, দল বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা করে দিলেও আবার তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া অন্যায়। বিদ্রোহীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।