শেখ হাসিনা গণভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন, ওষুধের কার্টনে করে এনেছিলেন ১২ কোটি টাকা: নুরুল হক
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেছেন, ‘গত নির্বাচনে শেখ হাসিনা টেলিফোন করে নির্বাচনে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। গণভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন। গণভবনে গিয়েও আমরা মাথা বিক্রি করি নাই, বিবেক বিক্রি করি নাই। শেখ হাসিনার টেলিফোনে বা ডিজিএফআই-এনএসআইয়ের চাপে। ওষুধের কার্টনে করে টাকা নিয়ে এসেছে। ১২ কোটি টাকা নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, বাংলাদেশের মানুষ এইরকম একটা রাজনৈতিক সংকটকালীন সময়ে আশাবাদী হচ্ছেন যে, এই আপসহীন তরুণেরা একটা ভালো কিছু করতে পারবেন। আমরা যদি বিক্রি হয়ে যাই, তাহলে মানুষ হতাশ হবেন যে, এই দেশে আর ভালো কিছু হবে না। সেই কারণেই স্রোতের বিপরীতে প্রতিকূল সময়ে আপসহীন থেকে এই পটপরিবর্তনের দিকে এগিয়ে গেছি।’
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে পটুয়াখালী শহরের নতুন বাজার এলাকায় গণ অধিকার পরিষদ পটুয়াখালী জেলা শাখা কার্যালয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নুরুল হক এসব কথা বলেন। নুরুল হক বলেন, ‘রাষ্ট্র কোনো ধর্মের প্রতি পক্ষপাত করতে পারে না। রাষ্ট্র পরিচালনা করে রাজনীতিবিদেরা, রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গিয়ে। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবেও আমাদের কারও প্রতি পক্ষপাত করার সুযোগ নাই। রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকার কারণে কোনো মানুষ হামলা-মামলার শিকার হবে না, ধর্মীয় কিংবা গোষ্ঠীগত ভিন্নতা থাকার ফলে কোনো মানুষ নির্যাতন-নিপীড়ন–বৈষম্যের শিকার হবে না। এটি নিশ্চিত করা গেলে নতুন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব।’
মতবিনিময় সভায় পটুয়াখালীর ২১টি হিন্দু পরিবার তাদের রেকর্ডীয় জমিতে প্রবেশ করতে পারছে না জানিয়ে তাদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে। তারা জানায়, একদল ভূমিদস্যু হিন্দুদের জমি দখলে নেমেছে। ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীরা তাদের খুন-জখমসহ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছে। হিন্দু পরিবারগুলো প্রতিকার চেয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।
নুরুল হক হিন্দু পরিবারগুলোকে বলেন, ‘আপনাদের জায়গায় আপনারা যাবেন। এই অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের আমরা চিনি। এখন তাদের নিরীহ মানুষ পেয়ে কোটি টাকার সম্পত্তি হজম করতে যাবেন, এটা পারবেন না। বরং এই আস্ফালন যাঁরা দেখাবেন, তাঁদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা নিজেদের দুর্বল ভাববেন না, সাহসী হবেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কথা বলবেন। কঠোরভাবে প্রতিবাদ করবেন। আপনাদের সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা এবং আমি সব সময় আছি, থাকব।’
গণ অধিকার পরিষদ পটুয়াখালী জেলা শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় দলটির কেন্দ্রীয়, জেলা ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিকেলে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নুরুল হক নুরকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ফাতিমা তাসনিমের বাড়ি কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের লেমুপাড়া গ্রামে। মূলত তাঁর উদ্যোগেই গণ অধিকার পরিষদের কলাপাড়া উপজেলা শাখার আয়োজনে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হককে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে বিকেল চারটায় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। তবে নুরুল হক সভাস্থলে বিকেল সোয়া পাঁচটায় এসে পৌঁছান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে গত ৩৩ বছরে যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় ছিল, পালাক্রমে তারাই ক্ষমতায় থেকে প্রশাসন থেকে সবকিছুতে দলীয়করণ করে দলীয় নেতাদের সুবিধা দিয়েছে। দেশের জনগণ ওইভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা পায় নাই। আমি মনে করি, রাজনীতি কোনো জমিদারি প্রথা নয়, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কোনো সাম্রাজ্য নয়। রাজার ছেলে রাজা হবে, এমপির ছেলে এমপি হবে, মেয়রের ছেলে মেয়র হবে, এর নাম রাজনীতি নয়।’
নুরুল হক আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো একটি ফ্যাসিস্ট দলকে ক্ষমতাচ্যুত করার কাজটি করেছে এ দেশের ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আজকে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখন নতুন বাংলাদেশকে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এ জন্য দরকার নতুন নেতৃত্ব। গণ অধিকার পরিষদ সারা বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে কাজ করছে। দেশে এখন নতুন ধারার রাজনীতিও চালু করা দরকার। আমরা জনগণের রাজনীতি চালু করতে চাই। আর সে রাজনীতির সূচনাও করেছে গণ অধিকার পরিষদ।’
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে নুরুল হক বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে সুফল এ দেশের মানুষ পেয়েছে, সে সুফল পৌঁছে দিতে গণ অধিকার পরিষদের জন্ম হয়েছে। দু-এক বছরের মধ্যে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। গণ অধিকার পরিষদ ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করবে।
উপজেলা প্রশাসন মাঠে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পটুয়াখালী জেলা গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশ নারী অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ফাতিমা তাসনিম, উচ্চতর পরিষদ সদস্য শহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আবু হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, প্রচার সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মো. ইউছুফ কাজী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম প্রমুখ। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রবিউল আউয়াল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।