পরিকল্পনা করেন দুই মন্ত্রী, বাস্তবায়নে সহায়তা করে র‍্যাব-পুলিশ: দাবি বিএনপি নেতার

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বিএনপির নেতা মনিরুল হক চৌধুরী। মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা আদালতের আইনজীবী সমিতি ভবনেছবি: প্রথম আলো

২০১৫ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা মেরে আটজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা আওয়ামী লীগের সাবেক দুই মন্ত্রীর পরিকল্পনায় সংগঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. মনিরুল হক চৌধুরী। তাঁর দাবি, বাসে হামলার পরিকল্পনা করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করে র‍্যাব ও পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী সমিতি ভবনের হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ-লালমাই-নাঙ্গলকোট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মনিরুল হক চৌধুরী এ দাবি করেন। আ হ ম মুস্তফা কামালও (লোটাস কামাল) ওই আসনের সদ্য সাবেক এমপি এবং মুজিবুল হক কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক এমপি।

লিখিত বক্তব্যে মনিরুল হক চৌধুরী দাবি করেন, চৌদ্দগ্রামে আট বাসযাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার আগে আ হ ম মুস্তফা কামালের ঢাকার গুলশানের বাসায় পরিকল্পনা হয়। সেখানে মুজিবুল হকও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তাঁরা গণভবনে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেন। পরে নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তার দায়িত্ব দেওয়া হয় র‍্যাব-পুলিশকে। সেই অনুযায়ী ৮ বাসযাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ২০১৫ সালে পুলিশের করা দুই মামলার এজাহার ও সাক্ষ্য-প্রমাণে তাঁর নাম না থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও হয়রানির উদ্দেশ্যে সম্পূরক অভিযোগপত্রে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আন্দোলন দমাতে তখন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের ফাঁসাতে লোটাস কামাল ও মুজিবুল হকের পরিকল্পনায় শেখ হাসিনার নির্দেশে র‍্যাব-পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বাসটিতে গানপাউডার দিয়ে নাশকতার ঘটনাটি বাস্তবায়ন করেন।

২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে ২০–দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় কক্সবাজার থেকে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি নৈশ কোচে (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪০৮০) ‘পেট্রলবোমা’ মারে দুর্বৃত্তরা। এতে আগুনে বাসে ঘুমিয়ে থাকা সাত যাত্রী ঘটনাস্থলে ও একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। মামলায় ৭৮ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৭ সালের ২ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলার প্রধান আসামি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। মামলার ৫১ নম্বর আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, শওকত মাহমুদ, মনিরুল হক চৌধুরীসহ অনেককে আসামি করা হয়।

এদিকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চৌদ্দগ্রামে বাসের ৮ যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর আবুল খায়ের নামের এক ব্যক্তি কুমিল্লার আদালতে মামলা করেন। মামলায় মুজিবুল হক, পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ও র‍্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়।

চৌদ্দগ্রামে বাসে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা প্রথম মামলাটির আজ আদালতের নির্ধারিত তারিখ ছিল বলে জানিয়েছেন মনিরুল হক চৌধুরীর আইনজীবী কাইমুল হক ওরফে রিংকু। তবে আদালত মামলার তারিখ পিছিয়েছে।