রংপুরে শেষ হাটে কমেছে কোরবানির পশুর দাম
রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় শেষ হাটে কোরবানির পশুর দাম কমেছে। তিন দিনের ব্যবধানে আজ রোববার প্রতিটি ছোট ও মাঝারি গরুর দাম ৮ থেকে ১৫ হাজার এবং ছাগল ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে। হাটে পশুর চেয়ে ক্রেতা কম ও বাইরের ব্যবসায়ীরা পশু কিনতে না আসায় দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী, খামারি ও হাট ইজারাদারেরা।
বদরগঞ্জে আজ কোরবানির স্থায়ী ও অস্থায়ী শেষ হাট বসে বদরগঞ্জ, ডাঙ্গির হাট, বৈরামপুর, বিচিবাড়ির হাট, নাগের হাটসহ অন্তত ১২টি স্থানে। বেলা দুইটার দিকে বদরগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা গেছে, তুলনামূলক কম গরু উঠেছে। ক্রেতার সংখ্যাও অনেক কম।
গরু ব্যবসায়ী বাদশাহ মিয়া বলেন, ‘আইজ দাম অনেক কম। প্রতি গরুতে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা নাই। গরু আইজ বেচপার না পাইলে আরও লস হইবে। কারণ, গরুর খাবারের দাম বেশি।’ তিনি আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত দুটি গরু বেচতে পারেননি। গরু দুটি ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। দুই দিন আগে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দাম উঠেছিল। ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাওয়ার আশায় বিক্রি করেননি। আজ সেই গরুর দাম উঠছে ১ লাখ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
হাটের ভেতরে ৫৫ বছর বয়সী একজনকে দড়ি হাতে একটি এঁড়ে গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। চোখে–মুখে হতাশার ছাপ। গরুর দাম কেমন জিজ্ঞাসা করতেই জবাব এল, ‘বাবা, কত দিবার চান দেও তো, গরু নিয়া যাও।’ একপর্যায়ে বললেন, ‘মোর এই গরুর ওজন তিন মণ। চাইর দিন আগোত বাড়িতে দাম করছিল ৯১ হাজার। আশায় আছনো লাখ টাকা হইবে। আইজ দাম করোচে ৭৬ থাকি ৭৭ হাজার। এই গরু বাড়ি ঘুরি নিয়া গেইলে প্রতিদিন খাবার দিবার নাগবে কম করি ৩০০ টাকার। এ্যালা চিন্তায় পড়ি গেছি।’ জানা গেল, তাঁর নাম ওমর ফারুক। তিনি বদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচাবাড়ি গ্রামে নিজ বাড়িতে গরুটি পুষেছেন।
হাটের তত্ত্বাবধায়ক মঞ্জুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার—দুই দিন বদরগঞ্জ হাট বসে। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট। কোরবানির সময় প্রতি হাটে অন্তত ২৫ হাজার পশু ওঠে। মানুষের সুবিধার জন্য তাঁরা আজ রোববার সেখানে কোরবানির হাট বসানোর ঘোষণা দেন। কিন্তু গরু উঠেছে কম। তিন দিনের ব্যবধানে প্রতিটি গরুতে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাম কমেছে। যে ছাগল দুই দিন আগেও ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে, সেটি আজ ১২ হাজার টাকায়ও কেউ নিচ্ছেন না। বাইরের ব্যবসায়ীরা হাটে না আসায় দাম পড়ে গেছে।
তারাগঞ্জ উপজেলায় আজ কোরবানির শেষ হাট বসেছিল ডাঙ্গির হাট, ওকড়াবাড়ির হাট, বুড়ির হাট ও চিকলির হাট। বিকেলে সরেজমিন ওকড়াবাড়ির হাটে দেখা গেল, গরু উঠেছে হাজার দেড়েক। সেখানে ক্রেতার চেয়ে গরু ছিল বেশি।
অন্তত তিন মণ ওজনের একটি গরু বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসেন ওকড়াবাড়ি গ্রামের মফিজার রহমান। বললেন, ‘হাটোত আইজ গরু কিনার মানুষ নাই। মনে হওচে মানুষের হাতোত টাকা নাই। এবার কোরবানিত একটা গরু পুষিয়া বুজিক ধরা খায়া গেইনো। দাম করোচে ৭৬ হাজার টাকা। গরুটা দুই বছর পুষতে খরচে হইচে ৬৫ থেকে ৬৬ হাজার টাকা।’
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, যাঁদের হাতে টাকা ছিল, তাঁরা আগেই কোরবানির পশু কিনে ফেলেছেন। তা ছাড়া কোরবানির শেষ হাটে গরু কিনতে বাইরের কেউ আসেননি। চাহিদা না থাকায় গরুর দাম কমে গেছে।
হাটের তত্ত্বাবধায়ক সরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তুলনামূলক কম দামে এবার কোরবানিতে পশু বিক্রি হয়েছে। গরুর খামারি ও কৃষকেরা গরু পুষে তেমন লাভ করতে পারেননি। এবার গরু বিক্রি হয়েছে কম। অনেক গরু অবিক্রীত থেকে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, এবার তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ দুই উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ৫০ হাজার ৮৬৩। প্রস্তুত ছিল ৫৯ হাজার ৫৬৫টি পশু।