সাতক্ষীরার আশাশুনি
দেড় বছর পরও ভাঙা সেতু মেরামত হয়নি
সেতুটির মাঝবরাবর ভেঙে কাত হয়ে পড়েছে। নদীর পাড়ে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক থেকে মানুষ নেমে হেঁটে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হচ্ছে।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মরিচ্চাপ নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি দেড় বছর আগে ভেঙে যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন করে সেতুটি নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আশপাশের এলাকার ১০ হাজার মানুষ এখন এ ভাঙা সেতু দিয়ে যাতায়াত করছেন। তবে গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে হলে ৮-১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়।
এদিকে এ সেতু কে নতুন করে নির্মাণ করবে, তা নিয়ে দুই বিভাগ একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা বলছেন, ওই সেতুর দুই পাশের সড়ক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাভুক্ত। ভেঙে পড়া সেতুটি সংস্কার কিংবা নতুন করে নির্মাণ এলজিইডি করবে। আর এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, সেতুটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় নির্মাণ করেছিল। সেতুটি নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যে ভেঙে পড়েছে। এখন দায়দায়িত্ব ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের।
জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের বাঁকড়া সেতু অবস্থিত। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির মাঝবরাবর ভেঙে কাত হয়ে পড়েছে। সেতুটির পাশে পলেস্তারা খসে পড়েছে, রডে মরিচা ধরেছে। নদীর পাড়ে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক থেকে মানুষ নেমে হেঁটে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হচ্ছে। এ সময় দেখা যায়, একজন রিকশায় করে কিছু মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন। সেতুর ভাঙা অংশটি ঢালু থাকায় চার-পাঁচজন মিলে রিকশাটি টেনে ওপরে তুলছে।
এ সময় কুন্দুড়িয়া গ্রামের রনোজিত সরকার বলেন, প্রতিদিন সাতক্ষীরা, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, আশাশুনি, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ এ সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। এ সেতু দিয়ে তাঁরা সদরে যাতায়াত করেন। এখন গাড়ি দিয়ে যেতে হলে ৮-১০ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে। সে ঝক্কি কমাতে এ ভাঙা সেতুর ওপর দিয়েই তাঁরা হেঁটে চলাচল করেন।
আশাশুনি উপজেলার কুন্দুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, তাঁদের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী সেতু পার হয়ে বাঁকড়ার ওপার থেকে আসে। এখন তারা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বর্ষাকাল আসছে। তখন তো এ ভাঙা সেতু দিয়েও পারাপার হওয়া যাবে না। নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হবে। তাঁরা দ্রুত এখানে একটি নতুন সেতু চান।
আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের এ বক্স আকৃতির সেতুটি নির্মাণ করে। এর ঠিকাদার ছিল পাইকগাছার মেসার্স জি এম হাসিব ট্রেডার্স। মরিচ্চাপ নদী খননের পর হঠাৎ করে ২০২২ সালের ৪ জুলাই সেতুটির মাঝবরাবর ভেঙে পড়ে।
স্থানীয় লোকজন জানান, আশাশুনি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মরিচ্চাপ নদী বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে। ডিঙিনৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে মানুষ আশাশুনি সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করত। স্থানীয় লোকজনের দাবির মুখে বুধহাটা ইউনিয়নের দক্ষিণে কুন্দুড়িয়া ও শোভনালী ইউনিয়নের উত্তরে বাঁকড়ায় এ সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি স্থানীয়ভাবে বাঁকড়া সেতু নামে পরিচিত। কিন্তু পাঁচ বছর যেতে না যেতেই সেতুটি ভেঙে পড়েছে।
আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সোহাগ খান জানান, মরিচ্চাপ নদীর বাঁকড়ার সেতুটি তাঁরা ২০১৬-২০১৭ সালে নির্মাণ করেছিলেন। তখন দুই পাশে কাঁচা সড়ক ছিল। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ওই সড়ক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পাকা করেছে। ফলে সেতুটিও এলজিইডির আওতায় পড়ে গেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জানান, সেতুর দুই পাশের সড়ক এলজিইডির এ তথ্য সঠিক নয়। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এ সেতু নির্মাণ করা হয়। একটি সেতু কমপক্ষে ৫০ বছর সচল থাকবে। পাঁচ বছরের মধ্যে ভেঙে পড়লে দায়দায়িত্ব তো ওই বিভাগকেই নিতে হবে। তারপরও জনসাধারণের ভোগান্তির কথা জানিয়ে তিনি সেতু নির্মাণ করার কথা বিবেচনা করতে দুই মাস আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছেন। কিন্তু কোনো নির্দেশনা আসেনি।
বুধহাটা এলাকার ওবায়দুর রহমান মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালান। আগে দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার তিনি সেতু পার হতেন। এখন সেতুর পাশেই যাত্রীদের নামিয়ে দেন। আবার কোনো সময় অতিরিক্ত পথ ঘুরে যেতে হয়। ফলে আয় কমেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এত দিন ধরে একটা সেতু ভেঙে পড়ে আছে। তারপরও এটা ঠিক করা হচ্ছে না। এভাবে তাঁরা আর কত দিন ভোগান্তি পোহাবেন?