পলিথিনে সুরমার সর্বনাশ 

সরকারিভাবে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের নির্দেশ জারি হলেও কার্যকর হয়নি। বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ব্যাগই দূষণ করছে সুরমা নদীকে। 

সিলেটের সুরমা নদীর বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনায় ছেয়ে গেছে। গতকাল সকালে সিলেট শহরের ছড়ারপাড় এলাকায়ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের সুরমা নদী শহরকে ভাগ করেছে দুটি অংশে। এক পাশে শহরের উত্তর অংশ, অন্য পাশে দক্ষিণ অংশ। সম্প্রতি শীত মৌসুম শুরুর পর সুরমা নদীর নাব্যতা কমেছে। চর জেগেছে বিভিন্ন অংশে। শুষ্ক সুরমা নদীর চর এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে নদীর উত্তর পাড় এখন ময়লায় ঠাসা। নগরের অভ্যন্তরে সুরমা নদীর বিভিন্ন অংশে এমন চিত্রই দেখা গেছে। উত্তরের তুলনায় সুরমা নদীর দক্ষিণ অংশে অপেক্ষাকৃত ময়লা–আবর্জনা কম দেখা গেছে। 

সুরমা নদীর দুই অংশের মধ্যে উত্তর অংশে সিলেট শহরের ব্যবসা–বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। অন্যদিকে দক্ষিণ অংশ সিলেট শহরের প্রবেশপথ। সুরমা নদীর পাড় ময়লা–আবর্জনামুক্ত করতে সিলেট সিটি করপোরেশনসহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও কিছুদিন পরই আগের অবস্থায় রূপ নেয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাসেবী কিছু তরুণের সঙ্গে ‘ক্লিন সুরমা গ্রিন সিলেট’ স্লোগানে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির তিন সংসদ সদস্য সুরমা নদীর উত্তর পাড়ের চাঁদনীঘাট এলাকায় পরিচ্ছন্ন অভিযান চালিয়েছিল। তবে এর কিছুদিন পরই আবার আগের মতোই ময়লা–আবর্জনার স্তূপ জমে ওই এলাকায়। 

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, সরকারিভাবে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের নির্দেশ জারি হলেও সেটি কার্যকর হয়নি। বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ব্যাগই দূষণ করছে সুরমা নদীকে। এ জন্য জনসাধারণকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি নদীকে ভাগাড়ে রূপান্তর থেকে রক্ষায় শহরের অংশে সিটি করপোরেশনের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। 

সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে শহরকে এবং নদীর তীর, ঘাট কিংবা পাড় পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ একলিম আবদীন বলেন, অপেক্ষকৃত কম জনবল নিয়ে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নদীর পাড় ময়লা-আবর্জনামুক্ত করতে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগের সহযোগিতা এবং নগরের বাসিন্দাদের সচেতনতা প্রয়োজন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট সুরমা নদীর উত্তর পাড়ের মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, কালীঘাট, চাঁদনীঘাট, কাজির বাজার, শেখঘাট, কানিশাইল এলাকায় সুরমা নদীর উত্তর পাড়ে ময়লা–আবর্জনায় ঠাসা। এসব জায়গায় গৃহস্থালির ময়লা–আবর্জনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ময়লা–আবর্জনা পলিথিন ব্যাগে ভরে ফেলা হচ্ছে এসব এলাকায়। 

কাজির বাজার অংশে সুরমা নদীর ওপর একটি সেতু রয়েছে। সেতুর পিলার ঘিরেও বেশ কিছু পলিথিনের ব্যাগ ময়লা–আবর্জনা ভরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে। একই চিত্র নগরের কালীঘাট, তোপখানা এলাকায়ও। নদীর পাড়ে ময়লার স্তূপে কলার কান্দা থেকে শুরু করে কর্কশিট, প্লাস্টিকের বোতল, বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের খালি পলিথিনের প্যাকেট, নারকেল, সুপারির বাকল, পরিত্যক্ত বস্তাসহ বিভিন্ন ময়লা–আবর্জনা ফেলা হয়েছে। 

নগরের কালীঘাট এলাকায় পথচারী শাহীন আহমদ বলেন, ময়লা–আবর্জনা ফেলে নদীর পাড়ের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। ময়লা–আবর্জনা পেলে নদীটির নাব্যতা কমেছে এতে নদীটিতে পানির ধারণক্ষমতা কমে প্রতিবছর শহরে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। 

সিলেট নগরের কাজির বাজারসংলগ্ন সুরমা নদীর পাড়ে পলিথিনে ময়লা–আবর্জনা ভরে ফেলা হয়েছে সুরমা নদীতে। কাজিরবাজারের ব্যবসায়ী ইলিয়াস মিয়া বলেন, নদীতে পানি থাকলে ময়লাগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এখন পানি না থাকায় ময়লাগুলো পাড়ে জমে রয়েছে। সবাই নদীর পাড়ে ময়লা ফেলেন, এ জন্য তিনিও ফেলেন। এতে কেউ নিষেধ দেন না বলেও তিনি জানান। 

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল করিম চৌধুরী জানান, পলিথিনকে স্থায়ীভাবে দূর করতে হলে স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। পলিথিনের বিকল্প সহজলভ্য করতে হবে। পলিথিন ব্যাগের বিকল্প সহজলভ্য না হওয়ায় বাজারে এখনো পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমেনি। পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন অব্যাহত রেখে ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। পলিথিন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও অভিযান চোখে পড়ে না।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, জনসাধারণের সচেতনতার পাশাপাশি এ ব্যাপারে সব বিভাগের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে জরিমানার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। সিলেট সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে পাউবোর সহায়তা চাইলে তারা সেটি করতে প্রস্তুত রয়েছে।